Thank you for trying Sticky AMP!!

ভোলায় গুলিবিদ্ধ চারজনকে ঢাকায় স্থানান্তর

আহতদের দেখতে রাতে হাসপাতালে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান

ভোলার নিজাম উদ্দীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রায়হান। বিদ্যুৎ ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবিতে ভোলায় বিএনপির ডাকা বিক্ষোভ–সমাবেশে অংশ নিতে সমাবেশস্থলে এসেছিল। সেখানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে রায়হানও গুলিবিদ্ধ হয়। মাথা, পা ও বুকে বেশ কয়েকটি ছররা গুলি লেগেছে তাঁর। রোববার সন্ধ্যায় রায়হানকে আনা হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ওয়ার্ডের শয্যায় যন্ত্রণায় কাঁতরাচ্ছিল সে।

রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেলে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের নিচতলা ও তৃতীয়তলার ওয়ার্ডে গুলিবিদ্ধ রোগীদের স্বজনদের দৌঁড়ঝাপ-ছুটাছুটি। কেউ ওষুধের জন্য কেউবা পানির জন্য ছুটছিলেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভর্তি বিবরণীতে দেখা যায়, রোববার রাত ১০টা পর্যন্ত ভোলা থেকে ১৯ জনকে এই হাসপাতালে আনা হয়। চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এরা সবাই রাবার বুলেটেবিদ্ধ।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা কারও কারও শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাঁদেরকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। কারও গায়ে-পিঠে-হাতে এমনকি অনেকের সারা শরীরে রাবার বুলেটবিদ্ধ। গুলিবিদ্ধ গোলাম মাওলা নামের এক ছাত্রদল কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, ‌‘আমরা সমাবেশ শেষ করে ব্যানার নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন পুলিশ আমাদের ব্যানার কেড়ে নেয়। এরপর লাঠিপেটা এবং তারপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু করে।’

জাহিদ নামে আরেক ছাত্রদল কর্মী বলেন, ‘আক্রমণের পর আমরা দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিই। কিন্তু গুলি থেকে রক্ষা পাইনি।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভর্তি বিবরণীতে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন নজরুল (৩১), নূর আলম (৩৪ ), লিখন (২২), আল আমিন (৩৪), অমিত হাসান (১৯), নূর উদ্দীন (১৮), ইউসূফ (২৫) , মনির (৩০), রুবেল (২৬), সালাউদ্দীন (২৮), মনির (৩০), শামীম (১৭), রায়হান (১৪), বজলুর রহমান (৫০), রফিক মিস্ত্রি (৪০), আরিফ (২০), জহিরুল ইসলাম (৩০)। বাকি দুজনের নাম পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালে আহতদের দেখভাল করছেন বরিশাল জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ উদ্দীন বাবলু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে যাঁরা এসেছেন তাঁরা সবাই গুরুতরভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী তাঁরা। আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না কতজন এখানে এসেছেন। যেভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তা দেখার মতো নয়।’

রাতে পৌনে ১০টার দিকে হাসপাতালে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান। তিনি বলেন,‌ ‘একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি চালানো হয়েছে। আমাদের লোকদের হত্যা করা হয়েছে। কোনো সভ্য দেশে এটা কীভাবে সম্ভব?’

Also Read: ভোলায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক

বিলকিস আক্তার জাহান আরও বলেন, এখন পর্যন্ত যতদূর খবর আছে তাতে ২৫ জন নেতা-কর্মী গুরুতর গুলিবিদ্ধ। অনেক নেতা-কর্মী ঘরবাড়ি ছেড়ে পলাতক। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা সাজানো হচ্ছে।

রোববার ভোলা সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে গুলিতে একজন নিহত হন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।

বেলা ১১টার দিকে জেলা সদরের মহাজনপট্টিতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মো. আবদুর রহিম। তিনি সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

Also Read: ভোলায় গুলি করে হত্যার ঘটনায় বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচি

বিএনপির দাবি, পুলিশ অতর্কিতভাবে তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিয়ে গুলি চালিয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সমাবেশের অনুমতি নিয়ে মিছিল বের করায় পুলিশ বাধা দিলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপির সমাবেশ করার অনুমতি ছিল, কিন্তু মিছিলের অনুমতি ছিল না। বিএনপি মিছিল বের করে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তাদের কাছেও অস্ত্র ছিল। এ ঘটনায় পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছেন।