
দেশের শীর্ষ গণমাধ্যম প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যখন ঘটছিল, তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল। তবে এই বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন নিশ্চুপ। তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ হামলার দায় সরকারের। সরকারের নীরবতা রহস্যজনক। আজ মঙ্গলবার বিকেলে গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম নগরের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মারুফ বলেন, ‘বিগত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে যে অরাজকতা ও অস্থিরতা চলছে, তার তীব্র নিন্দা জানাই। সম্প্রতি হিন্দুধর্মাবলম্বী দীপু চন্দ্র দাসকে পুড়িয়ে হত্যা এবং রাউজানে হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। দেশে কোনো শৃঙ্খলা নেই। নিরাপত্তা নেই।’
হাসান মারুফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। এরপর ঠিকই এসব প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির একে ‘ব্যক্তিগত অপরাধ’ বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।
প্রকাশ্যে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার হুমকি দেওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে হাসান মারুফ বলেন, ‘যাঁরা দিনের আলোয় মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকি দেন এবং পরে সেখানে আগুন লাগে, তারা পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে কীভাবে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ায়?’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ বর্তমান সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে হাসান মারুফ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদের রক্ত এবং আহত যোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে এই সরকার ক্ষমতায় বসেছে। কিন্তু বর্তমান সময়েও শেখ হাসিনার আমলের মতো ‘দঙ্গলবাজি’ ও অরাজকতা চলছে, যা সরকার দমন করতে পারছে না। এই ব্যর্থতার দায় সরকারকে নিতে হবে।
ছায়ানট, উদীচী, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের ওপর সংঘটিত হামলা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত বলে মনে করেন হাসান মারুফ। তিনি বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে নির্দিষ্ট কিছু দাবি উত্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে গণমাধ্যমে হামলাকারী এবং উসকানিদাতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা, রাউজানের হিন্দু বাড়িতে আগুন দেওয়া, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি, শিশু আয়েশা আক্তার, দীপু চন্দ্র দাস এবং আইনজীবী আলিফসহ সব হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম নগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী হাসান মুরাদ শাহ। সঞ্চালনা করেন নির্বাহী সমন্বয়কারী মো. মোরশেদুল আলম।
এতে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের উত্তর জেলার সমন্বয়কারী নাসির উদ্দিন তালুকদার, নির্বাহী সমন্বয়কারী জাহিদুল আলম, মহানগর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাধন দত্ত, মহানগর সদস্য কলি কায়েয, ফয়সাল উদ্দিন প্রমুখ।