কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে মনিরুল হক চৌধুরী (বাঁয়ে) ও ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়কে আমিন-উর-রশিদের অনুসারীরা সমাবেশ করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে
কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে মনিরুল হক চৌধুরী (বাঁয়ে) ও ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়কে আমিন-উর-রশিদের অনুসারীরা সমাবেশ করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে

কুমিল্লা–৬

উত্তেজনার মধ্যে কুমিল্লায় পাশাপাশি স্থানে বিএনপির দুই পক্ষের সমাবেশ

উত্তেজনার মধ্যে কুমিল্লায় একই সময়ে পাশাপাশি স্থানে সমাবেশ করেছে বিএনপির দুই পক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বরে এক পক্ষ ও কান্দিরপাড় ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়কে জেলা ও মহানগর কার্যালয়ের সামনে অন্য পক্ষ সমাবেশ করেছে। দিনভর উত্তেজনা বিরাজ করলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই দুই পক্ষের সমাবেশ শেষ হয়েছে।

আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা–৬ আসনে প্রাথমিকভাবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এখানে চূড়ান্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা আমিন–উর–রশিদ (ইয়াসিন)। ৩ নভেম্বর বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে আমিন–উর–রশিদের সমর্থকেরা নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

দুই পক্ষ থেকে আজ কুমিল্লার ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠে সমাবেশের আহ্বান করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত টাউন হল মাঠে কোনো পক্ষকেই কর্মসূচি করতে দেয়নি জেলা প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা থাকায় গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী মাঠ বরাদ্দের জন্য দুই পক্ষের আবেদনকারী ব্যক্তিদের চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেন।

তবে দুই পক্ষই কর্মসূচি পালনে অনড় থাকায় নগরে আতঙ্ক ছড়ায়। পরে মাঠের প্রধান ফটকের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে মাঠ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নেয়। বিকেলে কান্দিরপাড়ে পাশাপাশি স্থানে সমাবেশ করে দুই পক্ষ।

আমাকে কাজে লাগান, আমি ভালো কামলা: মনিরুল হক চৌধুরী

টাউন হল মাঠে সমাবেশ করতে না পেরে নগরের কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বরে দুটি পিকআপ ভ্যানে মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ করেন মনিরুল হক চৌধুরী। কুমিল্লা–৬ আসনে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন গণসমাবেশ’ ব্যানারে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

কান্দিরপাড় এলাকার পূবালী চত্বরে মনিরুল হক চৌধুরীর সমাবেশে আগত নেতা–কর্মীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে

সমাবেশে মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আজ আমাদের এই জনসভা টাউন হল মাঠে হওয়ার কথা ছিল। আমাদের বরাদ্দ ছিল টাউন হল। কিন্তু বাধ্য হয়ে পূবালী চত্বরে গণসমাবেশ করতে হয়েছে। এরপরও কারও প্রতি আমার অভিযোগ নেই। কুমিল্লা মহানগরের নেতাদের বলব, আমাকে যেহেতু বসতে দিয়েছেন, শুইতেও দিতে হবে। প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই, আমার কাছে তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক মনে হয়েছে। তবে আগামীকাল ও পরশু টাউন হল মাঠ আমাদের বুকিং করা আছে। আমি আপনাদের আজকের মতো কাল ও পরশুও কষ্ট দেব। কালকে ও পরশু কী কর্মসূচি হবে, সেটা আপনাদের রাতে ফেসবুকে জানিয়ে দেওয়া হবে। এই কুমিল্লা নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা আছে। আমি কাজের মানুষ। কুমিল্লাবাসীকে বলব, আমাকে একবার কাজে লাগান, আমি ভালো কামলা। আমি সবার জন্য দৃষ্টিনন্দন কুমিল্লা গড়ে দিয়ে যাব। আমার জীবনে চাওয়া–পাওয়ার আর কিছুই নেই।’

মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারীর (আবু) সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মাহমুদ (ওয়াসিম), দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা জামান প্রমুখ। সমাবেশে নেতা–কর্মীদের নিয়ে অংশ নেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র মনিরুল হক (সাক্কু)। তবে তিনি মঞ্চে আসেননি।

আমি পরীক্ষিত নেতা, ভেসে আসি নাই: আমিন–উর–রশিদ

একই সময়ে কান্দিরপাড় ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়কে জেলা ও মহানগর কার্যালয়ের সামনে পিকআপ ভ্যানে মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ করেন কুমিল্লা–৬ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী আমিন–উর–রশিদের অনুসারীরা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিনে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

কান্দিরপাড় ভিক্টোরিয়া কলেজ সড়কে জেলা ও মহানগর কার্যালয়ের সামনে আমিন–উর–রশিদের সমাবেশে আগত নেতা–কর্মীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমিন–উর–রশিদ বলেন, ‘নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমি বিএনপির কষ্টিপাথরে ঘষা পরীক্ষিত নেতা, আমি ভেসে আসি নাই। আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো লোক না। আমি যেখানে আছি, সেখানেই আমি মৃত্যুবরণ করতে চাই। এই কুমিল্লার মানুষের কল্যাণে আমার শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করব।’ তিনি বলেন, ‘কিছু গিরিঙ্গিবাজ এখনো বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য লেগে আছে। অনেকে বলে, দলের ভেতরেও কিছু এমন মানুষ আছে। আল্লাহকে হাজির–নাজির করে বলছি, তারা বিএনপির কিছুই করতে পারবে না। আমরা ছিলাম, আমরা আছি, আমরাই থাকব।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা (টিপু), আদর্শ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল কাইউম, সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম (রায়হান), দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল হকসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সড়ক দখল করে বিএনপির দুই পক্ষের সমাবেশের কারণে আজ বেলা তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত নগরের কান্দিরপাড় এলাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। দুই পক্ষের সমাবেশকে ঘিরে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তাব্যবস্থা চোখে পড়ার মতো ছিল।