
বাজারে নাগরিক সেবা আর শৃঙ্খলার চিত্র ভয়াবহ। তীব্র যানজট, ফুটপাত দখল করে হকারের দোকান, শব্দদূষণ, বাসস্টেশন ও গণশৌচাগারের অভাব, অবৈধ তিন চাকার যানবাহনের বিশৃঙ্খল চলাচলের কারণে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্রেতা-বিক্রেতারা।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্র আমিরাবাদের বটতলী স্টেশন। ৫০টি বিপণিবিতান, সাড়ে ৩ হাজার দোকান, ১০টি বেসরকারি হাসপাতাল, ২৫টি ব্যাংকের শাখা রয়েছে এই স্টেশনে। ফলে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের পদচারণে মুখর থাকে এলাকাটি।
শুধু লোহাগাড়া নয়, পাশের লামা, চকরিয়া, সাতকানিয়ার অসংখ্য মানুষ নিত্যপ্রয়োজনে ভরসা রাখেন বটতলীর ওপর। অথচ এই কেন্দ্রীয় বাজারে নাগরিক সেবা আর শৃঙ্খলার চিত্র ভয়াবহ। তীব্র যানজট, ফুটপাত দখল করে হকারের দোকান, শব্দদূষণ, বাসস্টেশন ও গণশৌচাগারের অভাব, অবৈধ তিন চাকার যানবাহনের বিশৃঙ্খল চলাচলের কারণে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্রেতা-বিক্রেতারা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, বটতলীর সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। দিনভর এই সমস্যা লেগে থাকে। অনেক সময় পুরো এলাকা অচল হয়ে যায়। প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ৪ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বাজারে ঢুকে পড়ে। যেখানে–সেখানে যাত্রী ওঠানামা ও অদক্ষ বাসচালকদের প্রতিযোগিতায় ভোগান্তি অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
শব্দদূষণে মানুষের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রক্তচাপ ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে।মো. ইকবাল হোসাইন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, লোহাগাড়া উপজেলা
বটতলী মোড়ের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ২০০ মিটার, প্রস্থে প্রায় ৩৭ মিটার। এই মোড়ের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। মহাসড়কের দুই পাশে পথচারীদের জন্য ১৪ ফুট করে ফুটপাত তৈরি করা হয়েছিল। এখন সেই জায়গা হকারদের দখলে। অন্তত চার শতাধিক হকার এখানে বসেন। প্রতিদিন তিন ধাপে বাজার পরিচালনা কমিটি, ইজারাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাঁদা দেন।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ফুটপাত দখলের কারণে যাত্রীদের ওঠানামা করতে হয় মূল সড়ক দিয়ে। এমনকি পথচারীদেরও হাঁটতে হয় গাড়ির ফাঁকে ফাঁকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অবৈধ তিন চাকার যানবাহনের দৌরাত্ম্য। ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনেই এগুলো চলছে, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা খুব একটা নেই।
যদিও লোহাগাড়া জোনে কর্মরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) হাসানুজ্জামান হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, গত ১০ মাসে অবৈধ তিন চাকার যানবাহনের বিরুদ্ধে ২ হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে শব্দদূষণ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। প্রতিদিন ঈগল পরিবহনসহ শত শত স্থানীয় বাস মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তোলে। এ কারণে যানজটের পাশাপাশি সৃষ্ট শব্দে নাজেহাল অবস্থা বটতলীর বাসিন্দা ও ১০টি বেসরকারি হাসপাতালের রোগীদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শব্দদূষণে মানুষের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রক্তচাপ ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে।’
বটতলীর নিয়ন্ত্রণ আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের হাতে ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী–সমর্থিত একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। অবশ্য কমিটি ব্যবসায়ীদের ভোটে নির্বাচিত নয়। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও ক্ষোভ আছে। এরই মধ্যে কমিটির দুই নেতা পদত্যাগ করেছেন। অনেক ব্যবসায়ী নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।
কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুবদল নেতা আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে শহর পরিচালনার দায়িত্ব ব্যবসায়ীদের হাতে হস্তান্তর করা হবে। নির্বাচিত কমিটি দায়িত্ব নিলে অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কের পাশে বাজার ও স্টেশনগুলোতে অবৈধ স্ট্যান্ড বসানো আর ফুটপাত দখলের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের হাত আছে। মোড়ে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। পরে চালকেরা পুষিয়ে নিতে বেপরোয়া গাড়ি চালান। এ কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
স্থানীয় লোকজনের দাবি, বটতলীতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে। দ্রুত বাস টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধানে সমন্বিত পদক্ষেপ নেবেন।