চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে আয়োজিত বৈঠকে বক্তব্য দেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান (ডানে)। আজ দুপুরে নগরের আগ্রাবাদ বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে আয়োজিত বৈঠকে বক্তব্য দেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান (ডানে)। আজ দুপুরে নগরের আগ্রাবাদ বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে: পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী

এ বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। আজ শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য আগ্রহ রয়েছে। তবে বিমান সংযোগ না থাকলে এটি সম্ভব নয়। আমরা এই বছরের শেষ নাগাদ সরাসরি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ও বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে ফ্লাইট চূড়ান্ত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোগে নগরের আগ্রাবাদ বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে জাম কামাল খান বলেন, দুই দেশে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হলে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, ব্যবসায়িক সংযোগ, পণ্য পরিবহনসহ সবকিছু আরও সহজ হবে।

জাম কামাল খান বলেন, ‘আগামী রোববার আমরা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ নিয়ে চুক্তি সই করব। দুই দেশের মধ্যে কী কী করতে হবে, তা এই গ্রুপ নির্দিষ্ট করবে। এর বাইরে আছে জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন। এটি দুই দেশের অর্থমন্ত্রীদের নেতৃত্বে কাজ করে। এ কমিশন শিক্ষা বিনিময়, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্পসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো দেখবে।’

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক পথনকশা (রোডম্যাপ) তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে জাম কামাল খান বলেন, ‘আমরা ভাবছি, আগামী কয়েক বছরের জন্য একটি বাণিজ্য রোডম্যাপ তৈরি করব। কোন খাতগুলোতে নজর দিতে হবে, কোথায় বিনিয়োগ আসবে, কোন খাত রপ্তানি-আমদানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে—সেসব ওই রোডম্যাপে উঠে আসবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ স্বাক্ষরের পরই এ বিষয়ে খসড়া তৈরি হবে।’

জাম কামাল খান বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য এখানে অসংখ্য সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। সাধারণত আমি যখন বিশ্বের অন্য কোনো জায়গায় যাই, তখন সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির প্রকৃত ক্ষেত্রগুলো খুঁজে পাওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বাংলাদেশ আমাদের পরিচিত। এ দেশের খাদ্য, সরবরাহ, নির্মাণসামগ্রী, টেক্সটাইল, পোশাক, চামড়া, জুতা—সবকিছুই আমাদের জানা আছে। আমরা ইতিমধ্যেই এসব খাত নিয়ে কাজ করছি। তাই আমাদের খুব বেশি গবেষণা করতে হয় না।’

ইতিমধ্যেই পাকিস্তান থেকে ১০টির বেশি প্রতিনিধিদল (ডেলিগেশন) বাংলাদেশে এসেছে উল্লেখ করে জাম কামাল খান বলেন, ‘আমরা তাদের জন্য চার-পাঁচ মাস আগে থেকেই নির্দিষ্ট কিছু খাত চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম, যেগুলোতে ফোকাস করা দরকার। আরও অনেক ডেলিগেশন আসবে সামনে। একইভাবে আমি এখানকার ব্যবসায়ী সমাজকেও পাকিস্তানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। শুধু ব্যবসায়ী পর্যায়ে (বিটুবি) নয়, বরং আমাদের জাতীয় মেলাগুলোতেও তারা অংশ নিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এ বছরের নভেম্বরে আমাদের ফুড এক্সপো হতে যাচ্ছে। বছরে আমাদের ছয় থেকে সাতটি ফ্ল্যাগশিপ এক্সপো হয়। এগুলো ব্যবসা বিস্তারের জন্য দারুণ প্ল্যাটফর্ম।’

গত দুই দিনের আলাপচারিতায় দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু, বন্দর সংযোগ, এফটিএসহ (মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি) নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন জাম কামাল খান। ভিসার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ভিসা প্রাপ্তি প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। এখন অনলাইনে আবেদন করলে অনলাইনে ভিসা পাওয়া যাচ্ছে। ছয়-সাত মাস ধরে পাকিস্তান ভিসা প্রক্রিয়া অনলাইনে করেছে।

দুই দেশে জাহাজ চলাচল নিয়েও কথা বলেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং করপোরেশন আমাদের প্রধান নৌবাহক। এ বছর তারা আরও জাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছে। শুধু বড় জাহাজই নয়, ছোট রুটের জন্য পণ্যবাহী জাহাজ ও কনটেইনার জাহাজও কিনবে। এর মাধ্যমে আমরা আঞ্চলিক সংযোগের কথা ভাবছি। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যের পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ ধরনের ব্যবসায় শিপিং লাইনগুলোই নির্ধারণ করে কোন রুট কতটা বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর। তবে যদি নির্দিষ্ট কোনো সরাসরি পণ্য যেমন, চাল, গম, নিত্যপণ্য—দুই দেশের মধ্যে আদান–প্রদান হয়, তাহলে ওই জাহাজগুলো দুই পক্ষের জন্যই উপকারী হবে। এতে শুধু সময় বাঁচাবে না, খরচও কমাবে।’

জাম কামাল খান বলেন, ‘সম্প্রতি এক চালবাহী জাহাজ বাংলাদেশে আসতে ১০ দিনের বেশি সময় নিয়েছিল। আমরা বাধাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। যৌথ উদ্যোগে আমরা বিশেষভাবে আগ্রহী। শুধু পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি নয়, আবার বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানিও নয়, বরং একসঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আফ্রিকা, সেন্ট্রাল এশিয়া, কিংবা অন্য দেশগুলোর বাজারেও ঢোকা যেতে পারে।’

পাকিস্তানের দিক থেকে সব সময়ই ব্যবসায়ী সমাজকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে উল্লেখ করে জাম কামাল খান বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির ধারা বদলাচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে আমরা কোথায় থাকতে চাই, কোন খাতে আমাদের শিল্পকে নিতে চাই, সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন প্রযুক্তি এআইয়ের সহযোগিতায় (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এখন আর বছরের নয়, ঘণ্টার হিসাবেই সবকিছু বদলে যাচ্ছে। তাই প্রস্তুত থাকতে হবে। খাদ্য, কৃষি, উৎপাদন, বাণিজ্য, মাছ, সামুদ্রিক খাদ্য, সেবা খাত, মানুষে মানুষে সংযোগ, স্বাস্থ্যসেবা—এসবই আমাদের অগ্রাধিকার খাত। লেদার, ফুটওয়্যার, তৈরি পোশাক; এগুলোতেও আমরা শক্তিশালী। পাকিস্তান গম, চাল উৎপাদন করছে এবং আরও অনেক কিছু সরবরাহ করছে। তাই আমার মনে হয়, এখানে দারুণ সহযোগিতা হতে পারে।’

বাণিজ্য উপদেষ্টা যা বললেন

বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের বাণিজ্যে বৈচিত্র্য ও সক্ষমতা বাড়াতে যতগুলো দেশের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারা সম্ভব, সবার সঙ্গে উদারভাবে সংযুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। বিক্রয় প্রবৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ মূল্যে আমদানির সক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে আমরা পাকিস্তানের প্রতিপক্ষের (বাণিজ্যমন্ত্রী) সঙ্গে সুন্দর সুন্দর সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করেছি।’

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাণিজ্য বৃদ্ধি করা, আমদানি ও রপ্তানির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং যেসব খাতের কথা জাম কামাল খান বলেন, ‘তার বাইরেও আমরা অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আশা করি, বাংলাদেশের সব ব্যবসায়ীর একত্র শক্তিতে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চেম্বারের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। বক্তব্য দেন বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলিহুসেইন আকবরআলী, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, চেম্বারের সাবেক পরিচালক আমজাদ হোসাইন চৌধুরী প্রমুখ। সমাপনী বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়া উদ্দিন। বৈঠকে বক্তারা দুই দেশে সরাসরি ফ্লাইট চালু, ব্যবসায়ী পরিধি বাড়ানোসহ নানা বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন।