
‘ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম থেকে ফিরে যেন তোকে হলে না দেখি। যদি কেউ কিছু বলে, বলবি, আমার নাম হাফিজ। তোর কে আছে দেখবোনে।’ কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে হাফিজ তাঁকে এভাবে শাসিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে ওই শিক্ষার্থীকে হলের কক্ষে গিয়ে মারধর করা হয়েছে বলে তিনি প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মাহফুজ উল হক। তিনি আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে মাহফুজকে মারধর ও হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে মাহফুজ প্রথমে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পরে যথাযথ নিরাপত্তা এবং হুমকি ও মারধরের বিষয়ে বিচার চেয়ে প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত মেহেদী হাসান ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগে মাহফুজ উল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ৪২০ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র তিনি। আজ বেলা ১১টার দিকে তিনি নিজ কক্ষে পড়ছিলেন। সাড়ে ১১টার দিকে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সোহানুর রহমান তাঁর কক্ষের সামনে এসে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ডাকেন। কিছুক্ষণ পর মেহেদী হাসান ওই কক্ষের সামনে আসেন এবং মাহফুজ গতকাল রোববার রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিলে গিয়েছিলেন কি না, তা জানতে চান। গিয়েছিলেন জানার পর তিনি (মেহেদী) ক্ষিপ্ত হয়ে মিছিলে যাওয়ার কারণ জানতে চান। তিনি চটে গিয়ে বলেন, ‘তুই কি রাজাকার? রাজাকার না হলে ওই মিছিলে গেলি কেন?’ মাহফুজ উল হক তাঁকে বলেন, ‘আমি রাজাকার হব কিসের জন্য? কোনটা ব্যঙ্গাত্মক আর কোনটা আসলেই, সেটা তো আপনার বোঝা উচিত।’এরপর মেহেদীর সঙ্গে কিছুটা কথা-কাটাকাটি হলে কক্ষে থাকা ঝাড়ু দিয়ে তিনি দুইবার মাহফুজের মাথায় আঘাত করেন। আরও মারতে উদ্যত হলে ডাকতে আসা সোহান ও সৌরভ তাঁকে ঠেকান।
অভিযোগে বলা হয়, চলে যাওয়ার সময় মেহেদী হুমকির সুরে মাহফুজকে বলে যান, ‘ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম থেকে ফিরে যেন তোকে হলে না দেখি। যদি কেউ কিছু বলে, বলবি, আমার নাম হাফিজ। তোর কে আছে দেখবোনে।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ কর্মী সোহানুর রহমান বলেন, ‘আজ ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ছিল। আমি মিছিলের জন্য ডাকাডাকি করতে গিয়েছিলাম। আমি মাহফুজকে ডেকে পাশের রুমে চলে যাই। এরপর আমার পেছন পেছন হাফিজ ভাই আসে। তারপর হঠাৎ চিল্লাচিলি শুরু হলে আমি গিয়ে দুজনকে থামিয়ে দিই। পরে হাফিজ ভাইকে নিয়ে আমি নিচে চলে আসি।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ করা হয়, তখন আমি মিছিলে ছিলাম। এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।’
অভিযোগপত্র পেয়েছেন জানিয়ে প্রক্টর শাহাদাৎ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।