এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ–৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা। রোববার সকালে রাজশাহী জিয়া পার্কে
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ–৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা। রোববার সকালে রাজশাহী জিয়া পার্কে

রাজশাহীতে কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব

আনন্দে ভরপুর উৎসবে ‘ভালো মানুষ’ হওয়ার প্রত্যয়

আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তিনটি লক্ষ্য লিখে জিতে নিন আকর্ষণীয় পুরস্কার। এ জন্য শিক্ষার্থীদের পূরণ করতে দেওয়া ফরমগুলো একটি বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থী লাবীবা কবীর লিখেছেন, ভালো মানুষ হওয়া, ভালো মানুষ হওয়া, ভালো মানুষ হওয়া। মুসলিমা খাতুন লিখেছেন, ভালো এবং সৎ মানুষ হওয়া, বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মেহেরিন সুবহা লিখেছেন, মাকে খুশি রাখা।

রাজশাহীতে উচ্চমাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এমন আয়োজন রাখা হয়েছিল। নগরের শহীদ জিয়া শিশুপার্কে ‘প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব-২০২৫’ নামের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এটি ছিল পঞ্চম আয়োজন।

রোববার সকাল ৯টায় রাজশাহীতে বইছিল হিমেল হওয়া। এর ভেতেরই শিক্ষার্থীরা সময়মতো এসে পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে যান। প্রথম আলোর আয়োজনে ও প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির পৃষ্ঠপোষকতায় ‘স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে, একসাথে’ স্লোগান নিয়ে দিনভর এ আয়োজন ছিল আনন্দে ভরপুর।

সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের শুরু হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ। এরপর শুরু হয় ক্যারিয়ার গাইডলাইন, উচ্চশিক্ষার পরামর্শ, কী পড়ব, কোথায় পড়বসহ নানা বিষয় নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক পর্ব। এই পর্বে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রফেশনাল ফেলো জাহিদ হোসাইন খানের সঞ্চালনায় কথা বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম (এমবিবিএস ৬৩ ব্যাচ), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) আইপিই বিভাগের শিক্ষার্থী নির্জরা দেবনাথ (প্রথা), শরীফ আব্দুল্লাহ (নাবিল), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী নিলয় সাহা (নীল) এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফুয়াদ পাবলো।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ–৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেলফি তোলেন শিল্পীরা

এই পর্বে আরও কথা বলেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী। তিনি নিজের জীবনের থেকে শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা পড়ে কাজ হবে না, যা পড়বে তা মনে রাখতে হবে। এই মনে থাকাটাই খুব জরুরি। পরীক্ষার হল পর্যন্ত গিয়ে পড়ারও দরকার নেই। আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে। দৈনিক পত্রিকাটা উল্টেপাল্টে পাঁচ মিনিট-দশ মিনিট দেখলে লাভ হয়। পত্রিকা পড়ার অভ্যাসটা থাকা ভালো। আর সুস্থ থাকতে হবে। সুস্থ না থাকলে আসলে ভালো কিছু করা যায় না। পত্রিকা পড়ার অভ্যাসটা ব্যক্তিজীবনে নানাভাবে কাজে দেবে। যার সাধারণ জ্ঞান বেশি, যে কিছুটা বেশি স্মার্ট, সে–ই এগিয়ে যাবে। শুধু মুখস্থ দিয়ে পরের জীবনে এগোনো যাবে না।

এ আয়োজনের জন্য প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ও প্রথম আলোকে ধন্যবাদ দেন রুয়েটের মেকানিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ আলী। নিজের বিভাগ নিয়ে তিনি জানান, যাঁরা মেধাতালিকায় প্রথম দিকে থাকেন, তাঁরাই এই বিভাগে পড়তে পারেন। তিনি বলেন, ‘ইলেকট্রনিকস রোবোটিক টেকনোলজিটাই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যেমন একজন নার্স হিসেবে কাজ করবে একটা রোবট। সে ডেটা সব স্টোর করে রাখবে এবং ডাক্তারকে কনসাল্ট করবে।’

শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য নির্ধারণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক আনোয়ারুল কবির জানান, আজ থেকে ৪০ বছর আগে এ ধরনের গাইডলাইন ছিল না। অনেক ছাত্র আছেন, যাঁরা নিজের বিভাগ ঠিকমতো নির্বাচন করতে না পারায় হতাশায় ভুগেছেন, যাঁরা বাংলাদেশের সেরা ডাক্তার হতে পারতেন, তাঁরা ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে বসে আছেন। যিনি সাংবাদিক বা লেখক হতে চেয়েছিলেন, পরিবারের সঠিক নির্দেশনা না পাওয়ায় তিনি অন্য কাজ করছেন।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ–৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক আনোয়ারুল কবির

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীসংখ্যা এখন প্রায় সমান উল্লেখ করে আনোয়ারুল কবির জানান, বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েও ছাত্ররা অনেকেই পথের দিশা খুঁজে পেয়েছেন এবং তাঁরা অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হলে হেলাফেলা না করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, ‘তোমাদের জন্য আমাদের দ্বার উন্মুক্ত। যারা জিপিএ-৫ পাওনি, তাদের হতাশার কোনোই কারণ নাই।’

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ জুলফিকার আলী বলেন, ‘রাজশাহীর কাছে আমার অনেক ঋণ। সেই ঋণ শোধের সময় এসেছে আমার। আমি প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির একটি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান। ক্যারিয়ার বিষয়ে যেকোনো পরামর্শের জন্য তোমরা আমার কাছে আসবে।’

নীল হুরে জাহানের উপস্থাপনায় জমে উঠেছিল সাংস্কৃতিক পর্ব। ‘মামুর ব্যাটারা ক্যামন আছেন?’ নীলের কণ্ঠে এই ঘোষণা শোনার সঙ্গে সঙ্গে যে যেখানে ছিলেন, সেখান থেকে যেন মৌমাছির মতো উড়ে এলেন। প্যান্ডেলের আশপাশে তখন আর তিল ঠাঁই নাই। সবার হাতের মুঠোফোন ক্যামেরা চালু হয়ে গেল। সংগীতশিল্পী জাহিদ অন্তু গাইলেন, ‘ভালোবাসব ভালোবাসবরে বন্ধু তোমায় যতনে’, ‘চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও’, ‘অহনা একটু কথা কহনা’ গান। এরফান মৃধা শিবলু মাতালেন ‘সাদা সাদা কালা কালা..’ গেয়ে।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ–৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা

অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনীকে পেয়ে শিক্ষার্থীরা আরও মেতে ওঠেন। অনেকেই তাঁকে মজার মজার প্রশ্ন করে পুরস্কার জিতে নেন। তটিনী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শিখে ভালো মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান।

সবশেষে মঞ্চে আসেন সংগীতশিল্পী রাফা। তিনি তাঁর ‘আমি আকাশ পাঠাব’সহ বেশ কয়েকটি গানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে তোলেন। অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে অভিভাবকেরা এসেছিলেন। তাঁরাও অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

চট্টগ্রাম, রংপুর, ঢাকা, খুলনার পর রাজশাহীতে ছিল পঞ্চম আয়োজন। দেশের বাকি তিন বিভাগীয় শহরেও শিগগিরই এ উৎসবের আয়োজন করা হবে। এসব আয়োজনের জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। অংশ নিতে নিবন্ধন করতে হবে এই লিংকে–www.hscgpa5fest.com