বিএনপির লোগো
বিএনপির লোগো

সিলেট-৪ ও ৬ আসন

একটিতে বিএনপির প্রার্থী পুনর্বিবেচনার, আরেকটিকে ‘স্থানীয়’ প্রার্থীর দাবি

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে দলটির নেতা-কর্মীদের একাংশ। এ ছাড়া সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে ‘স্থানীয়’ প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপির একটি অংশ সভা করেছে।

৩ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রার্থী তালিকায় দেখা যায়, সিলেট-১, সিলেট-২, সিলেট-৩ ও সিলেট-৬ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। তবে সিলেট-৪ ও সিলেট-৫ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। সিলেট-৬ আসনে দলের মনোনয়ন পান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী।

এদিকে সিলেট-১ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে আশাহত হন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুবারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় তাঁকে দলের উচ্চ পর্যায় থেকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। পরে গত বুধবার দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে আরিফুলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে আরিফুল জানান, দলের চেয়ারপারসন তাঁকে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। শিগগির এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হবে।

গতকাল রোববার বিকেলে গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে পীরেরবাজার এলাকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ অনুষ্ঠান–পরবর্তী পথসভা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও সিলেট-৪ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুল হাকিম চৌধুরী।

সিলেট-৪ আসনে বিএনপিতে স্থানীয় প্রার্থী দেওয়ার দাবিতে পথসভা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আসনে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুল হাকিম চৌধুরী। গতকাল রোববার বিকেলে

গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী বক্তব্যে বলেন, ‘দলের যেকোনো সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে মেনে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু গুজব ছড়িয়ে নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করা হলে তৃণমূলে বিভক্তি বাড়বে। আমরা জানি, দল এখনো সিলেট-৪ আসনে কাউকে মনোনয়ন প্রদান করেনি। তাই আমি এখনো মাঠে আছি এবং চূড়ান্ত মনোনয়ন পর্যন্ত মাঠে থাকব।’

রুস্তমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইউনুস আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইমাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহবুব আলম, সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সহসভাপতি ওসমান গনি, উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মাহবুব আহমেদ, উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ প্রমুখ। এ সময় বক্তারা ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর বদলে ‘স্থানীয়’ প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আরিফুল হক চৌধুরীর মুঠোফোন নম্বরে কল করলে তিনি সাড়া দেননি। তবে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ নেতা বলেন, ‘তিনি (আরিফুল) কখনো দলের নির্দেশনার বাইরে যাননি। দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশেই তিনি সিলেট-৪ আসনে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন।’

সিলেট-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে বিএনপির একাংশ। গত শনিবার রাতে

এদিকে গত শনিবার রাতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ‘বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র ব্যানারে এক আলোচনা সভা হয়। এতে বিএনপির একটা অংশ সিলেট-৬ আসনে ‘একটা নিরপেক্ষ রিভিউ’র মাধ্যমে দলের প্রার্থী ঘোষণার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি করে।

বিয়ানীবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় এ সভা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন। এ সময় একাধিক বক্তা বিএনপির প্রার্থী পুনর্বিবেচনার জন্য দলের উচ্চপর্যায়ের প্রতি অনুরোধ জানান।

ছরওয়ার হোসেন প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি ও চরম খারাপ অবস্থা ছিল ২০১৮ সালে। দলীয় নেতৃবৃন্দের ওপর মামলা, হামলার পরও ১ মিনিটের জন্য এ আসন থেকে ফয়সল আহমদ চৌধুরী সরে যাননি। বীরদর্পে এলাকার নির্বাচনী প্রচারণা করে ১ লাখ ৮ হাজার ভোট পেয়েছেন।’ তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘যেহেতু আমাদের মহাসচিব মনোনয়ন ঘোষণার সময় বলেছেন, এটি সম্ভাব্য তালিকা। চূড়ান্ত তালিকা এখনো হয়নি। আমাদের দাবি, চূড়ান্ত তালিকায় যেন ফয়সল আহমদ চৌধুরীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’

এ বিষয়ে সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী এমরান আহমদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদলের মাধ্যমে আমার রাজনীতি শুরু। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি থেকে শুরু করে বিএনপির নানা দায়িত্বে ছিলাম। এখন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। দলকে সাংগঠনিকভাবে সুসংহত করতে সব সময় কাজ করছি। বড় দল হওয়ায় অনেকেই সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন, এর মধ্যে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছেন। তবে মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন এখনো অভিমান করে আছেন, তাঁরাও নিশ্চয়ই দ্রুত ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করবেন।’