Thank you for trying Sticky AMP!!

বাড়ির উঠানে স্টিলের দুটি খাটিয়ায় রাখা হয়েছে দুই ভাইয়ের লাশ। বৃহস্পতিবার সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর এলাকায়

গায়েহলুদের মঞ্চের পাশে দুই ভাইয়ের লাশ, আনন্দ রূপ নিল বিষাদে

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় মাটিবাহী ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় দুই ভাই নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে গোয়ালন্দের নবুওসিমদ্দিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর এলাকায় বাড়িতে গিয়ে গায়েহলুদের মঞ্চের পাশে দুই ভাইয়ের লাশ দেখা যায়। পাশে আহাজারি করছিলেন স্বজনেরা।

নিহত দুই ভাই হলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুরের মোকছেদ সরদারের বড় ছেলে মনিরুল ইসলাম (৩২) ও ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম সুমন (২৭)। মনিরুল ইসলাম গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সাইফুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন।

গোয়ালন্দ মোড় আহ্লাদীপুর হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এম আল মামুদ বলেন, খবর পেয়ে গতকাল রাতেই দুর্ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেল ও মাটিবাহী ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাকচালক পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাইফুল ও তাঁর আরেক ভাই শামীউলের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছিল বুধবার। আজ শামীউলের ও কাল সাইফুলের বিয়ের হওয়ার দিন ছিল। আগামী শনিবার দুই ভাইয়ের একসঙ্গে বউভাতের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে বিয়েবাড়ির আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে।
আহাজারি করছেন স্বজনেরা। বৃহস্পতিবার সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর এলাকায়

স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মনিরুল ইসলাম গাজীপুর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। গতকাল রাতে সাইফুল ইসলাম মোটরসাইকেল নিয়ে বড় ভাই মনিরুলকে আনতে দৌলতদিয়া ঘাটে যান। সেখান থেকে মনিরুল মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। মোটরসাইকেল আরোহী দুই ভাই গোয়ালন্দের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে নবুওসিমদ্দিনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে মাটি বহনকারী ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে। এতে মোটরসাইকেল থেকে দুই ভাই ছিটকে পড়লে ঘটনাস্থলেই মনিরুল মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সাইফুল ও তাঁর আরেক ভাই শামীউলের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছিল বুধবার। আজ শামীউলের ও কাল সাইফুলের বিয়ের হওয়ার দিন ছিল। আগামী শনিবার দুই ভাইয়ের একসঙ্গে বউভাতের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে বিয়েবাড়ির আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে।

বড় ভাইয়ের লাশ দেখে মারা গেলেন ছোট ভাই
দুই ভাইয়ের বিয়ে বলে সবাই আনন্দে ছিল। একসঙ্গে দুই ভাইয়ের মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। আজ বিয়ের সাজে থাকার কথা, সেখানে চিরবিদায় দেওয়া হচ্ছে।
বাচ্চু শেখ, প্রতিবেশী
সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে বিয়ে বাড়ির আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে।বৃহস্পতিবার সকালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর এলাকায়

আজ সকালে মনিরুল ও সাইফুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানের এক পাশে গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের মঞ্চ পড়ে আছে। গায়েহলুদের মঞ্চের পাশে দুটি স্টিলের খাটিয়ায় রাখা হয়েছে দুই ভাইয়ের লাশ। স্বজনদের কান্না থামছে না।

মোকছেদ সরদারের মেজ ছেলে শামীউল ইসলাম বলেন, পারিবারিকভাবে ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম ও তাঁর (শামীউল) বিয়ে ঠিক হয়েছে। আজ তাঁর এবং কাল সাইফুলের বিয়ের বরযাত্রা ছিল। শনিবার দুই ভাইয়ের বউভাত অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। গতকাল রাতে দুই ভাইয়ের একসঙ্গে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান হয়েছে। গায়েহলুদের অনুষ্ঠান শেষে রাত ১১টার দিকে বড় ভাইকে আনতে দৌলতদিয়া ঘাটে যান সাইফুল। ফেরার সময় দুর্ঘটনায় দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। বাড়িভর্তি স্বজন, এর মধ্যে এমন করুণ পরিস্থিতি হবে, কখনো ভাবতে পারেননি তাঁরা।

গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম (হলুদ পাঞ্জাবি পরা)। বুধবার রাতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর এলাকায়
‘এখন শুধু ভাইয়ের লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই’

প্রতিবেশী বাচ্চু শেখ বলেন, ‘দুই ভাইয়ের বিয়ে বলে সবাই আনন্দে ছিল। একসঙ্গে দুই ভাইয়ের মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। আজ বিয়ের সাজে থাকার কথা, সেখানে চিরবিদায় দেওয়া হচ্ছে।’