
সকালটা ছিল বার্ষিক পরীক্ষার টেনশনে ভরা। কেউ শেষ মুহূর্তে নোট দেখে এসেছে, কেউ আবার মা–বাবার সঙ্গে দ্রুত বিদ্যালয়ে পৌঁছেছে। কিন্তু বাগেরহাটের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ফটকে ঢুকতেই টেনশন উবে গিয়ে শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে হতাশা জেগে ওঠে। বিদ্যালয়গুলোর ফটকে টানানো হয়েছে পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ।
চার দফা দাবিতে দেশের সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে আজ সোমবার শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের ফলে বার্ষিক পরীক্ষার অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরাও। তাঁরা বলছেন, শিক্ষকদের আকস্মিক এই কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকে বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের আবার ফিরে যেতে হয়েছে।
হেদায়েত হোসেন নামের এক অভিভাবক প্রথম আলোকে জানান, তাঁর ছেলে নাবিল হোসাইন বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রভাতি শাখার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাবিলের টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। সকালে পরীক্ষায় অংশ নিতে বিদ্যালয়ে গিয়ে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে। শিক্ষকেরা নাকি ধর্মঘট করছেন, তাই পরীক্ষা নিচ্ছেন না তাঁরা। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং দুশ্চিন্তার।
বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমাতুজ জোহরা বলে, ‘সকালে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেছিলাম। স্কুলে পৌঁছে দেখি পরীক্ষা বন্ধের নোটিশ টানানো। এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’
জোহরার বাবা আলী আকবর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে চলে আসছিলাম। পরীক্ষা হবে না জেনে আবার তাঁকে আনতে যেতে হয়েছে—এটা চরম বিড়ম্বনা। সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন দায়িত্বহীন আচরণ আশা করা যায় না।’
বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিজ আহনাফের বাবা আমিরুল হক বাবু বলেন, ‘স্কুল থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে আমাদের বাসা। আগে থেকে কোনো নোটিশ না দিয়ে এভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ করা মোটেও ঠিক হয়নি। এটা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব ফেলবে। শিক্ষকদের দাবিদাওয়া থাকতে পারে। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা, বাজে নজির হয়ে থাকবে।’
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ কর্মসূচি চলছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের কাছে। তাঁরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করছেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত যে কদিন থাকবে, সে পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। আপাতত আজ পরীক্ষা স্থগিতের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাট সদর ছাড়াও মোংলা, কচুয়া, মোরেলগঞ্জসহ জেলার ৯ উপজেলার সবগুলো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা একযোগে এই কর্মবিরতি পালন করছেন। বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে এমন কর্মসূচিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিভাবকেরা।
শিক্ষার্থীদের হতাশা ও অভিভাবকদের ক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক গোলাম বাতেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গতকাল শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সারা দেশে এ কর্মসূচি হচ্ছে। আমরা আবারও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলছি।’