
কলেজটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ২ হাজার ৫০০ জন। শিক্ষকদের ৫১টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৮ জন।
ছয় তলা নতুন একাডেমিক ভবনে চলছে লিফট স্থাপনের কাজ। রয়েছে বিস্তৃত সবুজ মাঠ আর কোলাহলমুক্ত পরিবেশ। কলেজটির চাকচিক্য দেখে পছন্দ করবেন না এমন মানুষ কমই রয়েছেন। তবে ভেতরের পরিবেশ ভিন্ন। শিক্ষক ও লোকবলসংকটে কলেজটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সরকারি হাজী আবদুল বাতেন কলেজের চিত্র এটি। এটিই দ্বীপ উপজেলাটির একমাত্র সরকারি কলেজ। সাড়ে ছয় একরের এ ক্যাম্পাসে সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, অধ্যক্ষসহ মাত্র তিনজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। ছয় তলা ভবনটির নিচতলায় শুধু একজন অফিস সহায়ক ছাড়া আর কেউ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল কলেজটিতে শিক্ষকদের ৫১টি পদের মধ্যে ৩৩টিই শূন্য।
জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ এস এম আবুল হাশেম বলেন, শিক্ষক সংকট থাকায় তাঁকেও অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়। অন্যান্য পদের লোকবলেও রয়েছে চরম সংকট। এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলেও দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষক সংকট থাকায় পাঠদানে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। সংকট মোকাবিলায় আমরা প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে পাঁচজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। কিন্তু এটি কোনো টেকসই সমাধান নয়। শূন্যপদ পূরণের জন্য বিশেষ চাহিদাও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো সাড়া পাইনি।এস এম আবুল হাশেম, অধ্যক্ষ, সরকারি হাজী আবদুল বাতেন কলেজ।
কলেজটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ২ হাজার ৫০০ জন। শিক্ষকদের ৫১টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৮ জন। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার গিয়ে কলেজটিতে পাওয়া যায় ১১ জনকে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজে চারটি বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। আর বাকি বিষয়ের শিক্ষকদের অনেকেই নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। এ কারণে পড়াশোনা ব্যাহত হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। এর বাইরে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, শারীরিক শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষকের পদও খালি। এ ছাড়া বিজ্ঞান বিভাগের রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ও গণিতে শিক্ষক থাকার কথা তিনজন করে। তবে এসব বিষয়ে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন করে। বর্তমানে কলেজটির একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রয়েছেন ৬২ জন। শিক্ষক সংকট থাকায় তাঁদের সবাইকে ভুগতে হচ্ছে।
সংকটের এখানেই শেষ নয়। বাংলায় স্নাতক (অনার্স) কোর্স থাকলেও এটি চলছে মাত্র দুজন প্রভাষক দিয়ে। তাঁরা আবার একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ক্লাসও করান। আর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ক্লাস হয় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক দিয়ে।
জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ এসএম আবুল হাশেম বলেন, ‘শিক্ষক সংকট থাকায় পাঠদানে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। সংকট মোকাবিলা আমরা প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে পাঁচজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। কিন্তু এটি কোনো টেকসই সমাধান নয়। শূন্যপদ পূরণের জন্য বিশেষ চাহিদাও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো সাড়া পাইনি।’
কলেজটির বিজ্ঞান বিভাগের প্রদর্শক পদের চারটিই শূন্য রয়েছে। এতে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া হিসাব রক্ষক, প্রধান সহকারী, গ্রন্থাগারিকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে একজনও নেই। এ কারণে গতি আসছে না প্রশাসনিক কাজেও। কলেজের নথি অনুযায়ী, ২৮টি পদের বিপরীতে মাত্র ১০টিতে জনবল রয়েছে।
লোকবলের এ সংকটের প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ফলেও। কলেজটির চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কৃতকার্য হয়েছেন মাত্র ৩৬ দশমিক ৬৭ ভাগ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া মানবিকে মাত্র ১৫ দশমিক ৫১ ভাগ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২০ দশমিক ২৮ ভাগ শিক্ষার্থী এইচএসসিতে কৃতকার্য হয়েছেন। সন্দ্বীপের অন্য চারটি বেসরকারি কলেজের তুলনায় এ কলেজটিতেই পাসের হার সর্বনিম্ন।
এ কলেজ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে অভিভাবকদেরও। কলেজটির একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েও ছেলেমেয়েরা এমন ভোগান্তিতে পড়লে, তারা কোথায় যাবে। অবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ সংকট দূর করতে হবে।’
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ) খোদেজা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্দ্বীপসহ দূরের কলেজগুলোতে আমরা যাদের পদায়ন করি, তাঁরা সেখানে থাকতে চান না। তাঁরা নানা ছুঁতোয় অন্যত্র বদলি হয়ে যান। আবার একাধিক শিক্ষক থাকলেও তাঁরা মাসে কেবল দু-এক দিন কলেজে উপস্থিত থাকেন। এমন সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা নিয়ে আমরা ভাবছি।’