চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। আজ রোববার বিকেলে নবাবগঞ্জ ক্লাব (টাউন ক্লাব) মিলনায়তনে
চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। আজ রোববার বিকেলে নবাবগঞ্জ ক্লাব (টাউন ক্লাব) মিলনায়তনে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সুধী সমাবেশ

‘প্রথম আলো সব সময় নিপীড়িত মানুষের পাশে রয়েছে’

‘প্রথম আলো সব সময় নিপীড়িত মানুষের পাশে রয়েছে। বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আদিবাসীদের বিপদে-আপদে প্রথম আলো পাশে থেকেছে। তারা সবাই হয়তো প্রথম আলো পড়তে পারে না; কিন্তু সবাই ধারণ করে যে প্রথম আলো তাদের পাশে আছে। এটাই তাদের শক্তি ও সাহস।’

প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আয়োজিত সুধী সমাবেশে এ কথা বলেন উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি হিংগু মুরমু। আজ রোববার বিকেলে নবাবগঞ্জ ক্লাব (টাউন ক্লাব) মিলনায়তনে আয়োজিত এ সমাবেশে শিক্ষক, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নিয়ে প্রথম আলো সম্পর্কে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।

বিকেল চারটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন।

অনুষ্ঠানে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুলতানা রাজিয়া বলেন, প্রতিবছর প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চার দিনব্যাপী ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। এত সমৃদ্ধ লেখা এত বেশি পরিমাণে থাকে, যা এক দিনে পড়ে শেষ করা যায় না। পরদিন আবার নতুন লেখা আসে। সম্পাদক মহোদয়ের কাছে অনুরোধ, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ক্রোড়পত্রগুলো যেন নভেম্বর মাসজুড়ে একটি একটি করে ছাপা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুলতানা রাজিয়া

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ বলেন, যাঁরা প্রথম আলোর সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেন, তাঁরাই প্রথম আলো বেশি পড়েন। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সেসব বিষয় প্রথম আলো তুলে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

একুশে পদকপ্রাপ্ত জিয়াউল হক বলেন, ‘আমার বই পড়ে ১৮ হাজার ছেলেমেয়ে শিক্ষিত হয়েছে। বিগত সরকার আমার পাঠাগার করে দিতে চেয়েছিল। গ্রামের স্কুলটি সরকারি করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন সেই সরকার নাই। তাই প্রথম আলোকে অনুরোধ জানাই, পত্রিকার মাধ্যমে যেন বিষয়টি তুলে ধরা হয়।’

একুশে পদকপ্রাপ্ত জিয়াউল হক এসেছিলেন প্রথম আলো সুধী সমাবেশে। তুলে ধরেন নিজের কথা। আজ রোববার বিকেলে নবাবগঞ্জ ক্লাব (টাউন ক্লাব) মিলনায়তনে

অনুষ্ঠানে মুড়ি-মুড়কি ও আমসত্ত্ব পরিবেশন করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘শুদ্ধ’। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কৃষি উদ্যোক্তা মুনজের আলম বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জায়গাগুলোয় কৃষির সম্পৃক্ততা আনা দরকার। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এত দিন আমরা সেটি পাইনি। আমাদের কৃষিতে ব্যাপক সম্ভাবনা ও সমস্যা আছে। এগুলো তুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরিতে ভূমিকা রাখার জন্য প্রথম আলোকে অনুরোধ জানাই।’

অনুষ্ঠানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা দলনিরপেক্ষ স্বাধীন সংবাদমাধ্যম হিসেবে প্রথম আলো শুরু করেছিলাম। এ জন্য জনসাধারণ আমাদের গ্রহণ করলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কখনোই স্বাধীন সংবাদমাধ্যম হিসেবে প্রথম আলোকে মানতে পারেনি।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। আজ রোববার বিকেলে নবাবগঞ্জ ক্লাব (টাউন ক্লাব) মিলনায়তনে

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, ‘দেশে এত বেশি বিভেদ! পরিবারের মধ্যে বিভক্তি, দলের মধ্যে বিভক্তি। এত বিভেদ নিয়ে একটি জাতি এগোতে পারে না। আমাদের পথ একটাই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করা। দেশের স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন হতেই হবে। আমরা সুসাংবাদিকতার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাই। দেশের সব ভালো কিছুর সঙ্গে থাকতে চাই।’

সাংবাদিকতার পাশাপাশি প্রথম আলোর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা বলতে গিয়ে সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা অদম্য মেধাবীদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আসছি। আইলা, সিডরের সময় জনণের পাশে ছিলাম। প্রত্যন্ত অঞ্চলে করেছি বাবুডাইং আলোর পাঠশালা। সেখানকার শিশুদের আজ দেখলাম, ভালো লেগেছে। তারা সুশৃঙ্খল। তারা এগিয়ে যাচ্ছে। তারা একদিন ভালো জায়গায় যাবে। তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা মেয়েদের বাল্যবিবাহ দেবেন না বলেছেন।’

প্রথম আলোর প্রতি সরকারগুলোর বিরূপ মনোভাব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এর আগেও বিভিন্ন সরকার প্রথম আলোর সরকারি-বেসরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করেছিল। তারা প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আইসিটি মামলাও দিয়েছে। কিন্তু প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা কমাতে পারেনি। থামাতেও পারেনি প্রথম আলোকে। প্রথম আলো আজও জনমানুষের কাছে চাহিদার পত্রিকা।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চাঁপাইনবাবগঞ্জের সভাপতি এ বি এম সাইদুল ইসলাম, প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ প্রমুখ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন মাহবুবুর রহমান, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি বিচিত্রা তিরকি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিটের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান, শিবগঞ্জ সরকারি আদিনা ফজলুল হক কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ মোজাহারুল ইসলাম, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আসলাম কবির, কবি ও সাহিত্যিক আনিফ রুবেদ, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, সমাজসেবী শামসুল হক গানু, বাবুডাইং আলোর পাঠশালার অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র দাস, প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর প্রমুখ।