বাস কাউন্টারের সামনে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ করেন দূরপাল্লার বাসের শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী নগরের শিরোইল এলাকায় ঢাকা বাস টার্মিনালে
বাস কাউন্টারের সামনে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ করেন দূরপাল্লার বাসের শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী নগরের শিরোইল এলাকায় ঢাকা বাস টার্মিনালে

৫ দিন ধরে রাজশাহীসহ তিন জেলা থেকে চলছে না দূরপাল্লার বাস, দুপুরে শ্রমিকদের সভা

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর থেকে টানা পাঁচ দিন ধরে দূরপাল্লার বাস চলছে না। আজ মঙ্গলবার পঞ্চম দিনের মতো এই ধর্মঘট চলছে, এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। গতকাল সোমবার দুপুরে মালিকপক্ষের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিলেও কাজে ফেরেননি পরিবহনশ্রমিকেরা। ফলে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধই আছে।

কাজে না ফিরে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের শিরোইল এলাকায় ঢাকা বাসস্ট্যান্ডের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন শ্রমিকেরা। তাঁদের মাথায় ছিল কাফনের কাপড় বাঁধা। আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকেও মাথায় কাফনের কাপড় পরে একই স্থানে বিক্ষোভ করছিলেন তাঁরা। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে তাঁরা নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন।

দেশ ট্রাভেলসের বাসচালক জিয়াউর রহমান বলেন, আজ দুপুরে নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে সব শ্রমিকদের সঙ্গে সভা আছে। তাঁদের এখন সাত দফা দাবি। হয় একতা পরিবহনের মতো সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে অথবা সাত দফা দাবি মানতে হবে।

শ্রমিকদের সাত দফা দাবি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চালকের জন্য ২ হাজার ২০০ টাকা, সুপারভাইজার ১ হাজার ২০০ ও হেলপারের (চালকের সহকারী) জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা দিতে হবে। রহনপুর ও কানসাট গেলে আরও ১০০ টাকা করে বেশি দিতে হবে। এ ছাড়া এসি বাসের জন্য চালককে ২ হাজার ৫৫০ টাকা, সুপারভাইজার ১ হাজার ৪০০ ও হেলপার পাবেন ১ হাজার ৩০০ টাকা; খোরাকি প্রতি বেলা জনপ্রতি ১৫০ টাকা; মুঠোফোন বিল ৩০ টাকা প্রতি ট্রিপ ও হোটেল বিল ২৫০ টাকা যাওয়া আসাতে; ঈদ বোনাস দিতে হবে; রিজার্ভ বাসের ক্ষেত্রে প্রতি বেলা ২০০ টাকা করে খোরাকি ও প্রতি দিনে ১টি করে বেতন; গাড়ি নাটোর পার হয়ে নষ্ট হলে ফুল বেতন দিতে হবে; ঢাকা গাড়ি রেখে এলে বা গিয়ে নিয়ে আসলে ফুল বেতন দিতে হবে।

জিয়াউর বলেন, আজ শ্রমিকেরা সবাই বসবেন। সেখানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের দাবি আবার জানাবেন। তাঁদের আন্দোলন চলবে।

গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিক পক্ষ। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকেরা তিন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। দুই দিন পর মালিকপক্ষের আশ্বাসে তাঁরা বাস চলাচল শুরু করলেও আশানুরূপ বেতন-ভাতা বৃদ্ধি না হওয়ায় ২২ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে আবারও কর্মবিরতি শুরু করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল পর্যন্ত একতা ছাড়া বাকি সব বাস বন্ধ ছিল। তারপর বৃহস্পতিবার মালিকপক্ষ বাস বন্ধ করে দেয়। এখন মালিকপক্ষ বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিলেও কাজে ফিরছেন না শ্রমিকেরা।

গতকাল দুপুরে টিকিট কেটেছিলেন রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য, সকালে এসে দেখেন এখনো বাস চালু হয়নি। ভোগান্তিতে পড়েন দূরপাল্লায় যাওয়া মানুষেরা। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী নগরের শিরোইল ঢাকা বাস টার্মিনালে

গতকাল বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ঢাকায় বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে মালিক ও শ্রমিকনেতাদের সভা হয়। সভায় রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সর্বসম্মতিক্রমে শ্রমিকদের বেতন–ভাতাসংক্রান্ত আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, একজন চালক রাজশাহী থেকে ডাবল ট্রিপের জন্য ১ হাজার ৭৫০ টাকা, সুপার ভাইজার ৭৫০ টাকা ও হেলপার ৬৫০ টাকা পাবেন। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট বা রহনপুর থেকে চালক ১ হাজার ৯৫০ টাকা, সুপারভাইজার ৮০০ টাকা ও হেলপার ৭০০ টাকা পাবেন। এদিকে খোরাকির টাকাও বাড়ানো হয়েছে। আগে খোরাকির টাকা ছিল ২১০ টাকা। এখন এটি বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত না মেনে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন।

এদিকে টানা পাঁচ দিন ধরে বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীরা সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যাত্রীদের অভিযোগ, মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বের খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁদের। কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনে ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার অনেককে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে প্রাইভেট কার বা স্থানীয় বাসে যেতে হচ্ছে।

আরিফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী ঢাকায় যাবেন বলে অপেক্ষা করছিলেন। গত রাতে তিনি টিকিট কেটেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আজ বাস চলবে বলে টিকিট কেটেছিলাম। এখন এসে দেখি, বাস চলবে না।’

রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। তবে গত রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ঢাকায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস চলার কথা, তবে চলছে না। তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।

উত্তরবঙ্গ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব নজরুল ইসলাম ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছিলেন। আজ সকালে তিনি বলেন, শ্রমিকেরা যেহেতু মানছেন না। তাঁরা আবার নতুন করে মালিকপক্ষের সঙ্গে বসার চেষ্টা করছেন। এই অবস্থার নিরসন দ্রুত করা দরকার।