
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, পিআর পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বেশ কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সমাধান হচ্ছে না বলে পাঁচ দফা দাবি দিয়ে আন্দোলনে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।
জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহীতে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল–পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোয়াজ্জেম হোসেন এ কথা বলেন। শুক্রবার বিকেলে নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দেওয়ায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অনেকেই আমাদের বলছেন, আলোচনায় থাকা সত্ত্বেও কেন আপনারা আন্দোলনে যাচ্ছেন? এর কারণ, আলোচনা করা সত্ত্বেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। কোনো কিছুর চাপের মুখে সরকার এক শুভংকরের ফাঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ।’
জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ থেকে চিরতরে ফ্যাসিজমের পথ রুদ্ধ হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সবচেয়ে উপযুক্ত সরকার। সরকারকে বলব, কোনো সংকট তৈরি না করে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আপনি নির্বাচন অনুষ্ঠান করুন। বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে আবারও ফ্যাসিজমের জন্ম হবে, আরেকটি হাসিনা সরকারের জন্ম হবে।’
মোয়াজ্জেম হোসেন আরও বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বরাবরই চেয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি রাজনৈতিক মহলের প্রভাব খাটানোর ফলে সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারছে না। আমরা দাবি করেছি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে। ৫ আগস্ট ড. ইউনূস জুলাই ঘোষণা পেশ করেছিলেন। সেই ড্রাফটটা একটা বিশেষ মহলের প্ররোচনায় পড়ে জন–আকাঙ্ক্ষাবিরোধী অনেক কিছু উপস্থাপন করা হয়েছিল। আমরা সেটা সংশোধন করতে বলেছিলাম। যদি নির্বাচনের আগে তা সংশোধন করা না হয়, তবে দেশ মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে।’
জামায়াতের রাজশাহী মহানগরের আমির মাওলানা কেরামত আলীর সভাপতিত্বে এবং মহানগরের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল ও জেলার সেক্রেটারি গোলাম মোর্তুজার সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে মহানগরের নায়েবে আমির আবু মোহাম্মদ সেলিম, রাজশাহী সদর আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবদুল খালেক, মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ শাহাদৎ হোসাইন, অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে পাঁচ দফা দাবিতে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
‘তারা পিআর বোঝে না, কিন্তু চাঁদাবাজি বোঝে’
‘গণ-অভ্যুত্থানের বিচার হবে, তারপর সংস্কার, তারপরে নির্বাচন। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান হবে। কিন্তু পিআর পদ্ধতি ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।’ শুক্রবার রাজশাহীতে এক পথসভায় এমন কথা বলেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্থানীয় নেতারা। দুপুরে বিক্ষোভ মিছিলের আগে শহরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে এই সংক্ষিপ্ত পথসভা হয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহানগর ও জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এ পথসভায় বক্তব্য দেন দলটির জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী, মহানগরের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদ, জেলার সাধারণ সম্পাদক তারিক উদ্দিন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, গত ৫৪ বছরে যাঁরা শাসক ছিলেন, তাঁরা কখনোই শাসন করেননি, শোষণ করেছেন। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশবাসী মুক্তির যে পথ দেখেছিলেন, বর্তমানে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বর্তমানে একটি দল আবার ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ শাসনের জন্য পিআর পদ্ধতি ছাড়া তাড়াতাড়ি নির্বাচন চাচ্ছে। দেশের সম্পদ লুটপাট করার জন্য তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না। তারা পিআর বোঝে না, কিন্তু চাঁদাবাজি বোঝে।
এর আগে জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতে সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। শহরের সাহেববাজার ও মনি চত্বর প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
মিছিলে ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের মহানগরের সহসভাপতি ফয়সাল হোসেন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সভাপতি আবুল বাশার, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের জেলা সভাপতি হাফেজ আবুল হাসান, ইসলামী যুব আন্দোলনের মহানগরের সভাপতি হাসিবুর রহমানসহ দলটির নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।