
প্যাকেট খুলে কুড়মুড় করে খাচ্ছেন চিপস। তবে আলু নয়, কাঁঠালের। ভাবতে অবাক লাগলেও সত্যি সত্যি দেশের বাজারে এখন মিলছে এমন চিপস। এসব চিপস তৈরিও হচ্ছে দেশে। রাঙামাটি শহরের আসামবস্তির কাপ্তাই হ্রদের পাড় ঘেঁষে এমনই একটি চিপস তৈরির কারখানা করেছেন তিন বন্ধু প্রমথ চাকমা, সুবিমল চাকমা ও শান্ত চাকমা। শুধু কাঁঠালের নয়, কলা দিয়েও চিপস তৈরি হচ্ছে কারখানাটিতে। আলুর চিপস তো রয়েছেই। আগামী মৌসুমে কারখানাটিতে আমের চিপস তৈরি করেও বাজারজাত করতে চান ওই তিন উদ্যোক্তা।
বেড়ার তৈরি ছোট একটি ঘরে স্থাপন করা হয়েছে কারখানাটি। গত বছরের অক্টোবর থেকে কারখানাটির কার্যক্রম শুরু হয়। কারখানাটিতে তৈরি হওয়া এসব চিপস এরই মধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে।
উদ্যোক্তারা জানান, রাঙামাটিতে বছরে কলা উৎপাদন হয় কমপক্ষে আড়াই লাখ মেট্রিক টন। বেশির ভাগ কলা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নেওয়া হয়। সারা বছরই কলার উৎপাদন হয়, দেশজুড়ে চাহিদাও রয়েছে। একইভাবে রাঙামাটিতে কাঁঠালের উৎপাদনও কম নয়। প্রতি মৌসুমে কমপক্ষে ১ লাখ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। কিন্তু চাষিরা ন্যায্য দাম পান না বললেই চলে। দাম না পাওয়ায় অনেক সময় বাগানেই পচে নষ্ট হয়ে যায় কাঁঠাল। কলা ও কাঁঠালের চিপস বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকহারে উৎপাদন করা গেলে কৃষকদের ন্যায্য দাম পাওয়ার যে প্রত্যাশা, তা পূরণ হবে বলে আশাবাদী কারখানাটির উদ্যোক্তারা।
সম্প্রতি সরেজমিন বেড়ার ঘরে স্থাপিত ছোট কারখানাটিতে দেখা যায়, চিপস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উদ্যোক্তা প্রমথ চাকমা এবং শ্রমিক রিটন চাকমা। দুজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, আড়াই কেজি খোসাছাড়ানো কলা থেকে ৩০ গ্রাম ওজনের ৩০ থেকে ৩৫ প্যাকেট চিপস তৈরি করা যায়। চিপস তৈরিতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। শুরুতে দিনে ১০০ থেকে ১৫০ প্যাকেট চিপস উৎপাদন করা হতো। এখন দিনে তিন শ প্যাকেটের মতো চিপস উৎপাদন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে উন্নত মানের মেশিন বসিয়ে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার প্যাকেট চিপস তৈরির প্রস্তুতি ও চিন্তাভাবনা রয়েছে তাঁদের।
উদ্যোক্তা তিন বন্ধুর মধ্যে প্রমথ চাকমা ও সুবিমল চাকমা মূলত কারখানায় সময় দেন। শান্ত চাকমা সৌদিপ্রবাসী। সুবিমল চাকমাই মূলত চিপস তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে আসছেন। কারখানায় বর্তমানে দুজন কর্মচারী রয়েছেন। তবে বাজারের চাহিদা বিবেচনায় কারখানার পরিসরের পাশাপাশি শ্রমিকও বাড়ানো হবে বলে জানান উদ্যোক্তারা।
সুবিমল চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ গ্রাম ওজনের প্রতি প্যাকেট চিপস বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। এখন ই-কমার্সের মাধ্যমে উৎপাদিত চিপস বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দু-এক মাসের মধ্যেই আরও বড় পরিসরে কাজ শুরু করব। আম দিয়ে চিপস তৈরির প্রস্তুতিও আমাদের রয়েছে। আগামী আমের মৌসুমে তা করা হবে।’
কারখানা স্থাপনে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান সুবিমল চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের চিপস তৈরির এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখা গেলে পাহাড়ের কলা ও কাঁঠাল পচে আর নষ্ট হবে না। চাষিরাও ন্যায্য দাম পাবেন।’
কারখানার উদ্যোক্তা ও শ্রমিকেরা জানান, প্রথমে স্থানীয় বাজার থেকে কাঁঠাল ও কলা সংগ্রহ করা হয়। এরপর কারখানার দুই শ্রমিক এসব কাঁঠাল ও কলার খোসা ছাড়িয়ে নেন। পরে কাঁঠাল ও কলা পরিষ্কারের পর ছোট ছোট পিস করে মেশিনে ভেজে নেন। ভাজার পর চিপসের তেল শুকানো হয়। এরপর প্যাকেটজাত করা হয় চিপস।
তিন বন্ধুর এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয় জানিয়ে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের উদ্যোগ খুবই সম্ভাবনাময় এবং আমাদের জন্য সুখবর। কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে কলা ও কাঁঠালের উৎপাদন বেশ ভালো। নিজ এলাকায় চিপসের কাঁচামাল কম খরচে পাওয়ার কারণে উদ্যোক্তারাও লাভবান হবেন।’
রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটিতে কলা ও কাঁঠালের চিপস তৈরির বিষয়টি জেনেছি। যদি মান ঠিক রেখে চিপস তৈরি করা যায়, তাহলে এসব চিপস বেশ ভালোই বিক্রি হবে।