ঢাকার ধামরাইয়ে সেলফি পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষির সময় বাসচাপায় দুজন নিহত হয়েছেন। একই সময় আহত হয়েছেন আরও একজন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. রুবেল পারভেজ (৩২) টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার মোকছেদ আলীর ছেলে এবং মো. আবদুল মান্নান (২৩) মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার মমতাজ উদ্দিনের ছেলে। রুবেল পারভেজ ৪১তম বিবিএস-এ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি বর্তমানে বেসরকারি একটি ব্যাংকের ঝিটকা শাখায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর পরিবারের সবাই বর্তমানে ধামরাই পৌরসভার বাগনগর এলাকায় থাকেন।
এদিকে প্রায় একই সময়ে সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী একজন নিহত ও অপরজন আহত হয়েছেন। নিহত মো. ইসমাইল (১৭) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মধুপুর গ্রামের মো. খলিলের ছেলে। এ ঘটনায় নিহত ইসমাইলের বাবা আহত খলিলকে (৪০) সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সাভার হাইওয়ে থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ডের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচলের লেনে মানিকগঞ্জগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রুবেল পারভেজ, আবদুল মান্নানসহ কয়েকজন। এ সময় ঢাকাগামী সেলফি পরিবহনের দুটি বাস বেপরোয়াভাবে একটি অপরটিকে ওভারটেক করতে গিয়ে তাঁদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান রুবেল পারভেজ ও আবদুল মান্নান। এ সময় আহত মো. আক্তারুজ্জামানকে ধামরাই ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় পরে তাঁকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নূর রিফফাত আরা।
অপর দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন ঢাকা আরিচা মহাসড়কে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আরিচাগামী লেনে একটি কাভার্ড ভ্যান একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান মোটরসাইকেল আরোহী মো. ইসমাইল হোসেন। অপর আরোহী নিহত ইসমাইলের বাবা মোহাম্মদ খলিল মারাত্মকভাবে আহত হওয়ায় তাঁকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) শেখ আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরপরই উভয় পরিবহনের চালক ও চালকের সহকারী গাড়ি রেখে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে সেলফি পরিবহনের বাস ও কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের সদস্যেরা থানায় এসেছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
সেলফি পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। নিয়ম ভেঙে সার্ভিস লেনে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোর বিষয়টি না মেনে নিরবচ্ছিন্নভাবে গাড়ি চলাচলের লেনে যাত্রী ওঠানো–নামানোয় অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে গাড়ি চলাচলের লেনে বাসের জন্য অপেক্ষা করেন বলে দাবি করেন তাঁরা।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ধামরাই উপজেলা শাখার সহসভাপতি মো. ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকটি পরিবহনের বেপরোয়া মনোভাব এবং সড়কে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার ফলে মহাসড়কে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কে নিয়ম অনুযায়ী বাসে যাত্রী ওঠানামা করাতে হলে পরিবহনগুলোকে অবশ্যই সার্ভিস লেনে আসতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রশাসনের নজরদারির অভাবই মূলত দায়ী।