ঢাকার অদূরে সাভারে চাঁদা না দেওয়ায় গুলি ছুড়ে একটি খেয়াঘাট থেকে দুটি ট্রলার ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় অস্ত্র হাতে ট্রলারে এক ব্যক্তির দাঁড়িয়ে থাকার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সাভারের কাতলাপুরের কর্ণপাড়া মিলনঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী যুবদল নেতা মো. কামরুল ইসলাম সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পুলিশ রাতেই লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে। কামরুল সাভার পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের ধারণা করছে, আধিপত্য বিস্তার করে খেয়াঘাটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।
মামলার এজাহারে কামরুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সাভারের কাতলাপুরের কর্ণপাড়া মিলনঘাট পরিচালনা করছেন কামরুল ইসলাম। কিছুদিন ধরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থানার ফুডনগর মোল্লাপাড়ার অন্তর খান (২৬), মোর্শেদ খান (২৫), মোশাররফ খান (২৮), হৃদয় (২৫), রনি খানসহ (৪২) অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন ঘাট পরিচালনায় বাধা দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছিলেন। গতকাল বিকেল পৌনে ৬টার দিকে তাঁরা পিস্তল, ধারালো দেশি অস্ত্র, রামদা, চাকু, রড নিয়ে মিলনঘাটে উপস্থিত হয়ে পুনরায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা কামরুলকে মারধর করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে অন্তর খান পিস্তল সদৃশ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুঁড়েন। তাঁরা খোকন ও আরমান মাঝিকে মারধর করেন। কামরুলের দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা (ট্রলার) ছিনিয়ে নিয়ে সেখান থেকে চলে যান।
এদিকে পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাতলাপুর এলাকার খেয়াঘাটটি পরিচালনা করছেন মো. কামরুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে হেদায়েত উল্লাহ। ঘাটটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নদীর অপর পাড়ের সিঙ্গাইর থানার ফুডনগর মোল্লাপাড়ার অন্তরসহ কয়েকজনের সঙ্গে কামরুল ইসলামদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই দ্বন্দ্বের জেরে ট্রলার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত অন্তর ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান স্থানীয়রা।
কামরুল ইসলামের ছেলে হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সিঙ্গাইরের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী মাসখানেক ধরে চাঁদা দাবি করে আসছিল। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ নৌকায় করে তাঁরা অস্ত্রসহ সেখানে আসেন। অন্তর ৩ রাউন্ড গুলি করেন। পরে তাঁরা কয়েকজনকে মারধর করে দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে যান।’
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর ভাটিরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে লুট করা ট্রলার দুটি উদ্ধার করেছে সাভার মডেল থানা–পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আশপাশের লোকজন গুলির শব্দ শুনেননি বলে জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় পাওয়া লিখিত অভিযোগটি রাতেই মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। ট্রলার দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সাভার পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুবকর সরকার প্রথম আলোকে বলেন, মিলন ঘাট ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। বেশ কিছু দরপত্র জমা পড়েছে। সেগুলো যাচাই–বাছাইয়ের কাজ চলছে। এখনো কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি।