কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চরসাদিপুর ইউনিয়নকে গোপনে পাবনার সঙ্গে সংযুক্তের পাঁয়তারা করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে আজ রোববার দুপুরে কুমারখালী উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে এলাকাবাসী। মানববন্ধন শেষে চরসাদিপুরকে পাবনার সঙ্গে সংযুক্ত না করার দাবিতে কুমারখালী উপজেলা প্রশাসনের কাছে গণপিটিশন জমা দেন এলাকাবাসী।
চরসাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুল মজিদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম আজমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল উদ্দিন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জাকারিয়া আনছার, স্থানীয় ব্যবসায়ী মালেক বিশ্বাস, কৃষক হামিদ সরদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পদ্মা নদীর কারণে জেলা ও উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন চরসাদিপুর ইউনিয়ন। একটি চক্র ব্যক্তিগত স্বার্থে চরসাদিপুরকে পার্শ্ববর্তী পাবনা জেলার সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করছে। গত ১৩ আগস্ট বেলা ১১টায় পাবনা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিদর্শনে আসার কথা ছিল। এর প্রতিবাদে এলাকাবাসী মানববন্ধনের আয়োজন করেছিল। ওই দিন সকাল ১০টার দিকে কিছু দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ মানববন্ধনে হামলা করে এবং সমাবেশস্থলের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেছিল। এরপর সেদিন কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিদর্শনে আসেননি। কিন্তু গত মঙ্গলবার বিকেলে পাবনার প্রশাসন গোপনে সেখানে পরিদর্শন করে চলে গেছে।
বক্তারা আরও বলেন, একটি চক্র ব্যক্তিগত স্বার্থে পাবনার প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে চরসাদিপুরকে স্থানান্তরের পাঁয়তারা করছে। কিন্তু এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। প্রশাসনের কাছে তাঁরা গণপিটিশন দিয়েছেন। দাবি না মানলে হরতাল অবরোধ করা হবে। প্রয়োজনে ডিসি কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে প্রায় ২৫ বর্গমাইল আয়তন নিয়ে ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় চরসাদিপুর ইউনিয়ন। সেখানে ৯টি গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। এটি উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমটার এবং জেলা শহর থেকে প্রায় ২৯ কিলোমটার দূরে, যার উত্তর ও পশ্চিমে রয়েছে পাবনার হেমায়েতপুর ও দৌগাছি ইউনিয়ন। প্রায় ছয় কিলোমিটার পদ্মা পাড়ি দিয়ে জেলা ও উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন চরসাদিপুরের বাসিন্দারা। ভরা বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র বাহন ইঞ্জিনচালিত নৌকা। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর অধিকাংশ জুড়ে চর জাগে। এ সময় যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয় চরের বাসিন্দাদের। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চরসাদিপুরকে কুষ্টিয়া থেকে পাবনায় স্থানান্তরের বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেছের আলী খাঁ বলেন, ‘আমরা শান্তিতে আছি। জন্মভূমির নামেই থাকতে চাই। একবার তদন্তের নামে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার প্রশাসনের একটি গাড়ি এলাকায় এসে ঘুরে গেছে। আমাকে কিছুই জানায়নি।’
পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম ফুয়াদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবে প্রথম কার্য দিবস আমার। আমি চরসাদিপুর বিষয়ে কিছুই জানি না। তাই কিছু বলতে পারছি না।’
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, পাবনায় সংযুক্ত না করার দাবিতে এলাকাবাসী গণপিটিশন দিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।