Thank you for trying Sticky AMP!!

ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি

ট্রেনে ধর্ষণের শিকার সেই কিশোরীকে নিয়ে আর গ্রামে ফিরতে চান না বাবা

ভুলবশত লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে ধর্ষণের শিকার কিশোরী (১৪) মেয়েকে নিয়ে আর গ্রামের বাড়ি ফিরে যেতে চান না বাবা। তাঁর ভাষ্য, ‘গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কী করবাম? মাইনষে নানা কথা কইব। এইতা (এসব) তো আমার ছেড়ি (মেয়ে) সইতা পারতা না। মাইনষের মুখ তো আর বাইন্দা রাখতাম পারতাম না। সবডাই আমারার মতো গরিবের দুর্ভাগ্য।’

ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামে। মা–বাবার সঙ্গে সে গাজীপুরের জয়দেবপুরে থাকে। গত মঙ্গলবার রাতে তার জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার কথা ছিল। ভুলবশত সে ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে উঠে পড়ে। দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ট্রেনের অ্যাটেনডেন্ট আক্কাস গাজী তার টিকিট দেখতে আসেন। টিকিট না থাকায় আক্কাস গাজী তাকে একটি আসনে বসিয়ে দেন। এরপর আনুমানিক সকাল সাড়ে আটটার দিকে অ্যাটেনডেন্ট আসন থেকে তাকে কেবিনে এনে দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। পরে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে লালমনিরহাটের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

Also Read: ভুল ট্রেনে ওঠা কিশোরীকে কেবিনে নিয়ে ধর্ষণ, অ্যাটেনডেন্ট গ্রেপ্তার

এ ঘটনায় মামলা করার পর আক্কাস গাজীকে (৩২) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ এলাকার বাসিন্দা আক্কাসের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার বিভাগীয় মামলাও করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত বুধবার আক্কাস গাজীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে গতকাল তাঁর এক বাক্‌প্রতিবন্ধী ভাই ছাড়া অন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। যাত্রীবাহী ট্রেনে ধর্ষণের ঘটনাটি জানার পর বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়েন গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁরা অপরাধীর দ্রুত ও কঠোর বিচারের দাবি জানানোর পাশপাশি কিশোরীর জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ঘটনাটি জানার পর পরিবারের অন্য সদস্যরা গত বুধবার রাতে লালমনিরহাট যান।

আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কিশোরীর বাবা বলেন, তিনি মেয়েকে নিয়ে এখন আর গ্রামের বাড়িতে যাবেন না। শারীরিক ধকলের পর অবুঝ মেয়েটি কারও কটু কথা সহ্য করতে পারবে না। তার চেয়ে গাজীপুরে যেখানে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন, সেখানে চলে যাবেন। এখানে তাঁদের তেমন করে কেউ চেনে না। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে না।

Also Read: অ্যাটেনডেন্ট সাময়িক বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলা, তদন্তে কমিটি

কিশোরীর বড় চাচা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছোট ভাই স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুরে বসবাস করেন। তাঁর ভাই সেখানে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী বিভিন্ন মেসে রান্নার কাজ করেন। এই দম্পতির বড় মেয়েটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ছোট মেয়েটি (নির্যাতনে শিকার) একটু হাবাগোবা ও বয়স কম হওয়ায় মায়ের সঙ্গে থাকে। অন্যদিকে দুই ছেলে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন। বড় ছেলে আগামীতে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ছোট ছেলেটি বাক্‌প্রতিবন্ধী।

ভুক্তভোগী কিশোরী গতকাল দুপুরে লালমনিরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর বিকেলে তাকে আদালতের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

Also Read: ধর্ষণের ‘বিচার’ সালিসে, সাজা হচ্ছে জরিমানা, চড়থাপ্পড়