মৌলভীবাজার জেলা শহরসহ দূরের অনেক ক্রেতাই তাজা মাছ কিনতে ভোরবেলায় ওয়াপদা-কাশিমপুর হাটে আসেন
মৌলভীবাজার জেলা শহরসহ দূরের অনেক ক্রেতাই তাজা মাছ কিনতে ভোরবেলায় ওয়াপদা-কাশিমপুর হাটে আসেন

হাওরের সব তাজা মাছ, বিক্রি হতে দুই ঘণ্টাও লাগে না

সকালটা তখনো মৃদু লালচে আলোয় রঙিন। সারা রাত যাঁরা হাওর-নদীতে মাছ ধরেছেন, তাঁরা এখন হাতে নানা আকারের খালুই ঝুলিয়ে বা কাঁধে মাছের ভার নিয়ে হাটের দিকে ছুটে চলেছেন। সকালের এই রঙিন আলো যেমন দ্রুত বদলায়, হাটও চোখের পলকে ফুরিয়ে যায়।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের কাউয়াদীঘি হাওর ও কুশিয়ারা নদীর তীরে হাওর-নদীর মাছ নিয়ে সকালবেলা দুই ঘণ্টার হাট বসে। ওয়াপদা-কাশিমপুর হাটের বয়স প্রায় অর্ধশত বছর, তবে প্রতিদিন সকালবেলা মাছের এই হাট বসছে ২০-২২ বছর ধরে।

প্রতিদিন সকালে লাখ টাকার মাছ কেনাবেচা হয় এই হাটে। এখানে শুধু কাউয়াদীঘি হাওর ও কুশিয়ারা নদীর মাছই পাওয়া যায়। হাওর-নদীর মাছ হওয়ায় হাটের আলাদা কদর রয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা শহরসহ দূরের অনেক ক্রেতাই ভোরবেলায় এখানে মাছ কিনতে আসেন।

হাওরের টাটকা মাছ

গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে হাটে পৌঁছে দেখা গেল, বাজার তখন অনেকটাই জমে গেছে। হাটের দুই পাশ থেকে কেউ হাতে মাছের খালুই ঝুলিয়ে, কেউ কাঁধে মাছের ডালা নিয়ে দ্রুত হাটের দিকে আসছেন। আগে এলে আগে বিক্রি করার সুযোগ, তাই তাঁদের তাড়া।

বাজারে ঢুকেই হাটের দুটি আড়তের যেকোনো একটিতে মাছ নিয়ে হাজির হচ্ছেন বিক্রেতারা। নিলামের ডাক ওঠার পর ক্রেতারা গোল হয়ে অংশ নেন। নিলামে সবচেয়ে বেশি দাম বললেই মাছটি ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিক্রেতারা টাকা গুনে অন্য কিছু কেনাকাটা করছেন বা বাড়ির পথে চলেছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার এই মিলনমেলায় হাট জমজমাট হয়ে ওঠে।

ওয়াপদা-কাশিমপুর হাটে বিক্রির সময় খালুই, ডালাতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মাছ। গত শুক্রবার তোলা

এখানে নিজেদের খাওয়ার জন্য মাছ কিনতে আসা ক্রেতা আছেন। তবে বড় অংশ খুচরা বিক্রেতা। তাঁরা এখানে মাছ কিনে মৌলভীবাজার জেলা শহরসহ বিভিন্ন গ্রামীণ হাটে বিক্রি করেন অথবা গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন। মাছের মধ্যে আছে কই, চ্যাং, পুঁটি, মখা (মলা), কাকিয়া, বোয়াল, গ্রাস কার্প, কার্ফু, রুই, চিংড়ি, চাঁদা, স্থানীয় পুঁটা মাছসহ আরও বেশ কিছু প্রজাতি।

মাছের সঙ্গে অন্যান্য পণ্যেরও বেচাকেনা হয়। কেউ গৃহপালিত হাঁস-মোরগ নিয়ে এসেছেন। লাইন ধরে হাঁস-মোরগ বিক্রি করছেন অনেকে। রয়েছে সবজির দোকান, পান-সিগারেটের ভ্রাম্যমাণ দোকান। হাটের চা-স্টলে চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছে, প্লেটে বিক্রি হচ্ছে পরোটা ও আখনি।

সকাল ছয়টা থেকে হাট শুরু হয়, আটটার মধ্যেই মাছের কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়

স্থানীয় বাসিন্দা আশিক মিয়া বলেন, ‘এই বাজারে সব আউরিয়া (হাওরের) মাছ। কাউয়াদীঘি আউরিয়া আর কুশিয়ারা নদীর মাছ ছাড়া অন্য কোথাও থেকে মাছ আসে না। একটাও চাষর মাছ নাই।’

জেলেরা হাওরে মাছ ধরে সেই মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন ওয়াপদা-কাশিমপুর হাটে

সকাল ছয়টা থেকে হাট শুরু হয়, আটটার মধ্যেই মাছের কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়। শুক্রবারে মানুষ অন্যদিনের তুলনায় বেশি আসেন। আশির দশকের শুরুতে হাওর কাউয়াদীঘিকে ঘিরে মনু নদ সেচ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে হাটটি গড়ে ওঠে। আগে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে বিক্রির জন্য সরাসরি অন্যান্য হাটে যেতেন। এখন অল্প কিছু মাছ নিয়ে দূরে যেতে হয় না। প্রতিদিন সকালবেলায় এই হাটে এসে মাছ বিক্রি করেন।

ওয়াপদা-কাশিমপুর হাটে শুধু হাওর-নদীর মাছই পাওয়া যায়

হাটের একজন আড়তদার আকলু মিয়া বলেন, হাটের দুই আড়তে প্রতিদিন সকালে লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। তবে সব মাছ এখানে আসে না, আড়তের বাইরেও অনেক বিক্রি হয়।