রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার করার দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন করছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গত রোববার দিনভর রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে ভাঙচুর, তালা ঝুলানো, বিক্ষোভ ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল সোমবারও ছাত্রদল প্রশাসন ভবনের সামনে ৩ ঘণ্টার মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। তফসিল অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে এখনো নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি। তাঁদের ভোটাধিকার দেওয়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ মঙ্গলবার জানাবে।
রাকসুতে ভোটাধিকারের বিষয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন, সে বিষয়ে বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।
তাদের কেউ কেউ বলছেন, ক্যাম্পাসে এসে তাঁরা গত ১৭ আগস্ট থেকে ক্লাস শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় চেনার চেষ্টা করছেন। এমন সময়ে নির্বাচন নিয়েও ভাবতে হচ্ছে তাঁদের। তাঁরা ভর্তিপ্রক্রিয়ায় রাকসু ও হল সংসদের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিয়েছেন। সে হিসেবে ভোট দেওয়ার অধিকার তাঁদের আছে।
তবে নবীন শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বলেছেন, তাঁরা ক্যাম্পাসে নতুন। যাঁরা নির্বাচন করবেন, তাঁদের ভালোভাবে চেনেন না। এই পরিস্থিতিতে ভোটাধিকার পেলে কিছু রাজনৈতিক সংগঠন তাদের ভোটের ফায়দা নিতে পারে।
মো. ওয়াইস করনি ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষে পুরোদমে ক্লাস করছেন। তিনি ভোট দিতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে নতুন। ভর্তি হয়ে যথারীতি ক্লাস করছি। আমরা তো ভোটটা দিতে চাই। রাকসুর ফি পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হোক।’
ইংরেজি বিভাগের ঐশী রহমান (মারিয়া) বলেন, ‘আমরা ভর্তি হলেও এখন পর্যন্ত ক্লাস রোল পাইনি। স্টুডেন্ট আইডি কার্ড পেতে নাকি আরও সময় লাগবে। এখন শুনছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হবে।’ রাকসু সম্পর্কে ধারণা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব কলেজে পড়েছি, সেখানে কোনো সংসদ ছিল না। এখানে এসে শুনতে পাচ্ছি এ ধরনের ছাত্রসংসদ আছে। যে প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় করাসহ নানা কর্মকাণ্ড করতে পারেন, আমরা এর ভাগীদার হতে চাই। নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে চাই।’
তবে একেবারে ভিন্নমত ফারসি বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দিন কদরের। তিনি বলেন, ‘আমার মতে রাকসু নির্বাচনে নবীনদের ভোটাধিকার দেওয়াটা অযৌক্তিক। অধিকাংশ নবীন প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব ও নৈতিকতার ব্যাপারে ভালোভাবে জানেন না। আমরা নবীনরা যদি ভোটাধিকার পাই, কিছু রাজনৈতিক দল সেটার ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
ভোটার তালিকায় প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রায় সবার একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা রাকসুর নির্ধারিত ফি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই ভোটাধিকারের অধিকার আছে। আবার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করলে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা গেলে কোনো সমস্যা নেই।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার ও প্রার্থী হওয়া অবশ্যই ন্যায্য অধিকার বলে মনে করে ইসলামী ছাত্রশিবির। রোববার বিকেলে রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, প্রথম বর্ষের সব তথ্য আইসিটি সেন্টারে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঠিকঠাক কাজ করলে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগার কথা নয়। এতে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী মারুফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হিসেবে নির্বাচনে ভোটাধিকার থাকা ও প্রার্থী হওয়া তাদের মৌলিক অধিকার। তবে নির্বাচন পেছানোর শর্তে প্রথম বর্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
প্রথম বর্ষ থেকে পিএইচডি, এমফিল শিক্ষার্থীদের প্রার্থী ও ভোটাধিকার থাকা উচিত বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাকসু নির্বাচনে প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে পিএইচডি, এমফিল শিক্ষার্থীদের প্রার্থিতার সুযোগ ও ভোটাধিকার থাকা উচিত। প্রথম বর্ষের শুধু ভোট দেওয়া না, প্রার্থী হওয়ারও অধিকার আছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনেই এটা সমাধান হওয়া উচিত।