
মিসবাউর রহমান নামের একজনকে খুন করতে গিয়ে ভুল করে সুজন মিয়াকে (৩২) হত্যা করেন ভাড়াটে খুনিরা। চেহারা আর বয়সের মিল থাকায় এ ভুল হয় তাঁদের। মৌলভীবাজারে তরুণ আইনজীবী সুজন মিয়া হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের দেওয়া তথ্যে এ কথা উঠে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নিহত সুজন মৌলভীবাজার শহরতলির পূর্ব হিলালপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং সাত বছর ধরে জেলা জজ আদালতে আইন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৬ এপ্রিল রাতে মৌলভীবাজার কাশীনাথ আলাউদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে চলমান বাণিজ্য মেলায় আইনজীবী সুজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল নিহত সুজন মিয়ার ভাই এনামুল হক সুমন মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচজন হচ্ছেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নজির মিয়া ওরফে মুজিব (২৫), মো. আরিফ মিয়া (২৭), হোসাইন আহমদ ওরফে সোহান (১৯), রাজনগরের লক্ষণ নাইডু (২৩) এবং নেত্রকোনার (বর্তমানে মৌলভীবাজার সদরে বসবাসরত) আব্দুর রহিম (১৯)। তাঁদের আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, হত্যাকাণ্ডের পরপরই পুলিশ হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে। পুলিশ বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ, মুঠোফোনের বিভিন্ন তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে মূল পরিকল্পনাকারীসহ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী নজির মিয়া ওরফে মুজিব বলে জানান পুলিশ সুপার। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর দেওয়া তথ্যে হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, নজির মিয়ার সঙ্গে প্রতিবেশী মিসবাউর রহমানের জমিজমা–সংক্রান্ত পূর্ববিরোধ ছিল। মিসবাউর একটি ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করেন। মিসবাউরকে হত্যার উদ্দেশ্যে নজির এক দুধ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে লোক ভাড়া করেন। ওই দুধ ব্যবসায়ীর নাম লক্ষণ নাইডু। মৌলভীবাজার শহরতলির চাঁদনীঘাট এলাকায় একটি হোটেলে কাজ করার সময় লক্ষণ নাইডুর সঙ্গে নজির মিয়ার পরিচয় হয়। ৬ এপ্রিল মৌলভীবাজার কাশীনাথ আলাউদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বাণিজ্য মেলা চলছিল। সেখানে ভাড়াটে খুনিরা আইনজীবী সুজন মিয়াকে দেখে মিসবাউর রহমান মনে করেন। ভাড়াটে খুনিরা সঙ্গে সঙ্গে নজিরকে এ কথা জানান। বিষয়টি নিশ্চিত করতে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া আব্দুর রহিম ইমো অ্যাপে নজির মিয়াকে ভিডিও কল করে সুজন মিয়াকে দেখান। চেহারার মিল থাকায় সুজন মিয়াকে তাঁরা সবাই মিসবাউর বলে ভুল করেন। ৬ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১০টা ৫০ মিনিটে মৌলভীবাজার পৌরসভা কার্যালয়ের পশ্চিমে একটি ভাসমান ফুচকা-চটপটির দোকানের পাশে ফুটপাতের ওপর আইনজীবী সুজন চেয়ারে বসা ছিলেন। এ সময় ১০-১২ জন তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা করেন। ধারালো চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাতে সুজন মিয়াকে হত্যা করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের তৎপরতা অব্যাহত আছে। পুলিশ অন্য আসামিদের পরিচয় উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাঁদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। এদিকে নজির মিয়া যে মুঠোফোনের মাধ্যমে মিসবাউরকে আইনজীবী সুজনের ছবি পাঠিয়েছিলেন, সেই মুঠোফোন উদ্ধার ও জব্দ করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি এখনো উদ্ধার করা যায়নি।