
একদল তরুণ ও যুবক বালতি হাতে দৌড়াচ্ছেন। কিছু একটা তুলছেন আর ছুড়ে মারছেন। বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হচ্ছে। ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে।
শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাসপুর ইউনিয়নের চেরাগ আলী ব্যাপারীকান্দি গ্রামে এভাবে ৬০-৭০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। আজ রোববার সকালে বিবদমান দুই পক্ষের আধিপত্য বিস্তারের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।
এর আগে এ বছরের ৫ এপ্রিল ঠিক একইভাবে বিলাসপুর এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
জাজিরা থানা সূত্র জানায়, জাজিরার বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নাসির উদ্দিন ব্যাপারী এবং একই এলাকার তাইজুল ইসলাম ছৈয়ালের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ আছে। দুজনই বিলাসপুরের চেরাগ আলী ব্যাপারীকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। নাসির উদ্দিন বিলাসপুরের চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারী এবং তাইজুল স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুল জলিল মাতবরের সমর্থক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, আজ ওই দুই পক্ষের লোকজন গ্রামের দুটি স্থানে অবস্থান নিয়ে একে অপরের ওপর ককটেল ছুড়ে মারেন। তাঁরা দুই পক্ষের সমর্থকদের বসতবাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এ সময় দুই পক্ষের লোকজন অন্তত ৬০-৭০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। ওই ঘটনায় দুই ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বিলাসপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারী ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল জলিল মাতবরের সমর্থকদের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৫ এপ্রিল দুই পক্ষের লোকজন বিরামপুরে সংঘর্ষ জড়িয়েছিলেন। ওই ঘটনায় পুলিশের করা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ওই দুই নেতা কারাগারে যান। সম্প্রতি কুদ্দুস ব্যাপারী জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হন। আবদুল জলিল এখনো কারাগারে।
আজ সকালে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর এলাকায় যায় পুলিশ ও র্যাবের দুটি দল। পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে আটক করে। আর যাঁরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁরা পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে তাজুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিলাসপুরের আজকের ঘটনায় তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি ঢাকায় থাকেন, এ মুহূর্তে ঢাকায় আছেন। কোনো পক্ষ শত্রুতাবশত এ ঘটনায় তাঁর নাম জড়াচ্ছে।
ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিলাসপুরে আবারও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁরা এলাকা থেকে এখন পালিয়েছেন। ওই ঘটনায় দুই ব্যক্তি আহত হওয়ার কথা শুনেছি। তবে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। কোনো পক্ষ মামলা না করলে পুলিশই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করবে।