সোহাগ হোসেন
সোহাগ হোসেন

লাড্ডু খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে তিন বন্ধুর বিরুদ্ধে এক বন্ধুকে হত্যার অভিযোগ

যশোরের চৌগাছা উপজেলায় ইজিবাইকসহ চালক সোহাগ হোসেন রকি (২২) নিখোঁজের তিন দিন পর তাঁর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ রোববার ভোরে উপজেলার তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের পেছনের ভৈরব নদের সংযোগ খাল থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সোহাগ উপজেলার পুড়াহুদা গ্রামের লিয়াকত হোসেনের ছেলে। আটকরা হলেন পুড়াহুদা গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে সোহানুর রহমান, চৌগাছা পৌর শহরের ইছাপুর গ্রামের মৃত আবদুর রহিমের ছেলে সজল ইসলাম ও পাঁচনমনা গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে সুজন হোসেন। নিহত ও আটক চারজন বন্ধু ছিলেন। আটক তিন বন্ধু লাড্ডু খাওয়া নিয়ে বিরোধের জেরে সোহাগকে খুন করেন।

সোহাগের চাচা আজিজুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে ইজিবাইক নিয়ে সোহাগ বেরিয়ে যান। ওই রাতে তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। সন্ধ্যার পর থেকে তাঁকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। রাত আটটা–নয়টা পর্যন্ত তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় চৌগাছা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তাঁরা। পরে সোহাগের বাবা লিয়াকত হোসেন আজ একটি হত্যা মামলা করেন।

যশোর পিবিআই কার্যালয়ে অভিযোগ দিলে তারা তদন্ত শুরু করে। সন্দেহভাজন হিসেবে সোহানুর, সজল ও সুজনকে আটক করে পিবিআই। পরে তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আজ ভোরের দিকে ভৈরব নদের সংযোগ খাল থেকে সোহাগের লাশ উদ্ধার করা হয়।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোহাগ ও আটক তিনজন চৌগাছার গুড়মেলা ঘুরে গাঁজা সেবনের উদ্দেশ্যে তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের পেছনে ভৈরব ও কপোতাক্ষ নদের সংযোগ খালের মিলনস্থলের নির্জন জায়গায় যান। সেখানে চার বন্ধু একসঙ্গে আড্ডায় বসেন। এ সময় লাড্ডু খাওয়া কমবেশি নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গলায় রশি পেঁচিয়ে তিন বন্ধু মিলে সোহাগকে হত্যা করেন। পরে লাশটি খালের কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে রেখে তাঁর ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যান। চুরির ইজিবাইক বিক্রি করতে দুই বন্ধু যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি যাওয়ার পথে চৌগাছা-যশোর সড়কের আমবটতলা এলাকায় সন্দেহ করে পুলিশ তাঁদের গতিরোধের চেষ্টা করে। তখন তাঁরা ইজিবাইক ফেলে পালিয়ে যান।

ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার শিকার সোহাগ ও জড়িত তিনজন পরস্পর বন্ধু। তিনজনে মিলে সোহাগের ইজিবাইক চুরি করে বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল। চারজন গাঁজা কিনে নিয়ে ভৈরব নদের তীরে গিয়ে বসেন। গাঁজা সেবনের আগে তাঁরা লাড্ডু খান। লাড্ডু খাওয়া নিয়ে বিতর্কের একপর্যায়ে একজন নাইলন দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিলে সোহাগ মারা যান। এ ঘটনায় চৌগাছা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোহাগের ইজিবাইকটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ১৫৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার জন্য তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, সোহাগের বাবা লিয়াকত হোসেন বাদী হয়ে আজ একটি হত্যা মামলা করেছেন। আটক তিনজন এজাহারভুক্ত আসামি। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটক তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।