Thank you for trying Sticky AMP!!

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও বানাইটিলায় তিন দিন ধরে অবস্থান করছে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পাল। গত সোমবার বিকেলে তোলা

খাদ্যের সন্ধানে সমতলে আসছে বন্য হাতির পাল, ফসল পাহারায় কৃষক

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে সমতলে নেমে আসছে বন্য হাতির পাল। শাবকসহ অর্ধশতাধিক হাতির পালটি ক্ষুধার তাড়নায় দিশাহারা। তারা টিলায় থাকা গাছের ছালবাকল খাচ্ছে। লোকালয়েও আসছে। এতে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ফসলের খেতে হাতি প্রতিরোধে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা।

আজ বুধবার দুপুরে মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির একটি পাল সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে। বর্তমানে উপজেলার দাওধারা-কাটাবাড়ি জঙ্গলে হাতির পালটি রয়েছে। তারা খাদ্যের সন্ধানে এক টিলা থেকে অন্য টিলায় চষে বেড়াচ্ছে। ক্ষুধা নিবারণের জন্য গাছের ছালবাকল খাচ্ছে তারা।

Also Read: তেঁতুলিয়ায় তাণ্ডব চালানো বন্য হাতি দুটি ফিরে গেল ভারতে

বন বিভাগ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, জামালপুরের বকশীগঞ্জ এবং শেরপুরের ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় সারা বছর শতাধিক বন্য হাতি কয়েকটি পালে বিভক্ত হয়ে চলাফেরা করে। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পাল উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের দাওধারা-কাটাবাড়ি পাহাড়ে অবস্থান করছে। দলটি সারা দিন এক টিলা থেকে অন্য টিলায় খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রায়ই খাদ্যের সন্ধানে দলটি টিলা থেকে সমতলে নামছে। লোকালয়েও এসেছে কয়েকবার। এতে ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। হাতি প্রতিরোধে তাঁরা দিন-রাত পাহারা দিচ্ছেন। প্রায় প্রতি রাতেই হাতির পালটি জঙ্গল থেকে দুই কিলোমিটার পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে সীমান্ত সড়কে চলে আসছে।

সন্ধ্যা নামার আগেই হাতির দলটি বোরো খেতে নেমে আসতে চায়। তখন হইহল্লা করে হাতির পালটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ৪০-৪৫টি বন্য হাতি দল বেঁধে নাকুগাঁও এলাকায় টিলা থেকে আরেক টিলায় খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সমতলে নেমেও অবস্থান করছে। খাবার না থাকায় বন বিভাগের বিভিন্ন সামাজিক বনায়নের গাছের ছালবাকল তুলে খাচ্ছে হাতিগুলো। কখনো টিলার মাটি শুঁড় দিয়ে নিজের শরীরে ছুড়ে মারছে এসব হাতি। এ সময় সাত-আটটি হাতিশাবককেও দলটির সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। হাতির পাল দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। মানুষের বিচরণ দেখে একাধিকবার হাতি লোকজনকে তাড়া দেয়। এ সময় লোকজন দৌড়ে এদিক-ওদিক ছুটে যান।

Also Read: বাংলাবান্ধা সীমান্তে ভুট্টাখেতে আশ্রয় নেওয়া হাতি দুটির আক্রমণে একজনের মৃত্যু

আজ দুপুরেও খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে হাতির পালটি নাকুগাঁও টিলা এলাকায় অবস্থান করছে। স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ফসল রক্ষায় কৃষকেরা রাত-দিন পাহারা দিচ্ছেন। এ ছাড়া নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উদ্যোগে হাতি প্রতিরোধে ফসলি জমির ধারে জিআই তার ও একটি জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

হাতির পালটি ক্ষুধার তাড়নায় দিশাহারা। তারা সারা দিন এক টিলা থেকে অন্য টিলায় খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রায়ই খাদ্যের সন্ধানে দলটি টিলা থেকে সমতলে নামছে

তবে ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ফসল রক্ষায় ও হাতিকে নিরাপদ রাখতে বন বিভাগের পাশাপাশি ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম’ কাজ করছে। হাতির মাধ্যমে কোনো কৃষকের ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই হাতিকে বিরক্ত না করার জন্য বলা হচ্ছে।

নাকুগাঁও গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহিম (৫২) বলেন, এক সপ্তাহ ধরে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পালটি দিনে দাওধারা-কাটাবাড়ি জঙ্গলে অবস্থান করছে। সন্ধ্যা নামার আগেই হাতির দলটি বোরো খেতে নেমে আসতে চায়। তখন হইহল্লা করে হাতির পালটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এলাকায় হাতি থাকায় পালাক্রমে তাঁদের রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে।

Also Read: শিশুর পর হাতি আছড়ে মারল আরও এক ব্যক্তিকে

আরেক কৃষক আবদুল খালেক (৫৮) বলেন, এক একর জমির ধানে ও দিনমজুরির কাজ করে তাঁর চার সদস্যের সংসার চলে। ৬০ হাজার টাকা ধারদেনা করে দুই একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। ধানগাছও ভালো হয়েছে। কিন্তু সোমবার থেকে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির পাল খেতের পাশে অবস্থান করছে। এতে তাঁরা ফসল নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন।

নয়াবিল ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিবছর বন্য হাতির পাল খাবারের খোঁজে লোকালয়ে আসার কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি প্রাণহানিও ঘটছে। কৃষকদের সঙ্গে তিনিও হাতি প্রতিরোধে সেখানে অবস্থান করছেন। কেউ যেন হাতির ক্ষতি করতে না পারে, অন্যদিকে হাতির দলটিও যেন কৃষকের ফসল নষ্ট করতে না পারে। চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মশাল জ্বালাতে কেরোসিনের ব্যবস্থা করা হলে স্থানীয় কৃষকদের হাতি তাড়াতে সুবিধা হতো।

Also Read: বন্য হাতি ও মহিষের আক্রমণে ৪ মৃত্যু, আগুনে ক্ষতি ১৫১ কোটি টাকার