জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করা হয়। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ষষ্ঠ দিনের এই কর্মসূচি চলছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ নেই। তাঁরা (কর্মকর্তারা) বাড়িতে অবস্থান করছেন। আর তাঁরা (আন্দোলনকারী) খেয়ে, না খেয়ে কষ্টার্জিত টাকার জন্য কর্মসূচি পালন করছেন।
‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’–এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। এক বছর ধরে এই ব্যানারে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, মশালমিছিল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও একাধিকবার উপজেলা পরিষদ ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু কোনো গ্রাহকই টাকা ফেরত পাননি।
আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ভুক্তভোগীরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এরপর তাঁরা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কার্যালয় ঘেরাও করেন। এতে উপজেলা পরিষদসহ ২৩টি দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সেখানে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাফিজুর রহমান বলেন, ‘সত্যি কথা যদি বলি, এই সমিতিগুলোর মালিকসহ কর্মকর্তা টাকা নিয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার পর থেকেই প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক। আন্দোলকারীরা এভাবে টানা কর্মসূচি পালন করছেন। কিন্তু প্রশাসনের কোনো নড়াচড়া নেই। আন্দোলনকে আরও বেগবান করা হবে।’
জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোয় ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরে কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।
আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী বলেন, টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা ছাড়া কেউ ঘরে ফিরবেন না। যেভাবে আন্দোলন চলছে, ঠিক এইভাবেই চলতে থাকবে। এই আন্দোলনের ছয় দিনের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশানুরূপ কোনো আলোচনা বা আশ্বাস পাওয়া যায়নি। ফলে আন্দোলন অব্যাহত আছে। আন্দোলনকে আরও বেগবান করার জন্য কমিটির সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, বড় বড় সমিতির মালিকপক্ষকে এখানে আসতে হবে। কিন্তু আমরা বড় বড় সমিতির মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছি না। কারণ, তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে আন্দোলনকারীরা তাঁদের ঘেরাও কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।বিষয়গুলো আমি প্রতিদিনিই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে যাচ্ছি। এর বেশি এখন আর কিছুই করার নেই।’