গ্যালপ বলছে, বিত্তের সঙ্গে সুখের সম্পর্ক সামান্যই
>
- গ্যালপ বলছে, বিত্তের সঙ্গে সুখের সম্পর্ক সামান্যই
- সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড
- ধনী দেশ কাতার রয়েছে ৯২ নম্বরে
- ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১১৫
- আশপাশের দেশের অবস্থাও তথৈবচ
২০১৮ সালের ‘বিশ্ব সুখী প্রতিবেদন’ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটির রচয়িতা জাতিসংঘ-সমর্থিত গবেষণা সংস্থা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক। প্রতিবেদনে ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১১৫।
লক্ষ করছি, বাংলাদেশের মানুষের সুখাবস্থা কিন্তু দিন দিনই কমেছে। ২০১৩ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৮ নম্বরে। কিন্তু দুই বছর পর, ২০১৫ সালের প্রতিবেদনে তারা এক ধাপ কমে এসে দাঁড়ায় ১০৯ নম্বরে। এরপরের দুই বছর, অর্থাৎ ২০১৬ ও ২০১৭ সালে আরও এক ধাপ নেমে এসে দাঁড়ায় ১১০ নম্বরে। কিন্তু ২০১৮ সালে অবস্থা এত খারাপ কেন হলো, তার কোনো ব্যাখ্যা এই প্রতিবেদনে নেই।
খোঁজা যাক উত্তর। এত দিন আমরা ভেবেছি, যে দেশ যত ধনী, যার যত বেশি বিত্ত, সে তত সুখী। দেখা যাচ্ছে, কথাটা আদৌ সত্য নয়। জনমত জরিপ সংস্থা গ্যালপের উপাত্তের ভিত্তিতে সংস্থাটি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে বিত্তের সঙ্গে সুখের সম্পর্ক খুব সামান্যই। এই প্রতিবেদন অনুসারে, সুখ নির্ভর করে ছয়টি জিনিসের ওপর-উপার্জন, সুস্থ আয়ুষ্কাল, সামাজিক নির্ভরশীলতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, অপরের ওপর আস্থা ও উদারতা। উপার্জনকে যদি বিত্ত বলে ধরে নিই, তাহলে সুখের সে মোটে ছয় ভাগের এক ভাগ। এই ছয়টি উপাদানের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে পৃথিবীর ১৫৬টি দেশের কে কতটা সুখী, তার এক তালিকা দেওয়া হয়েছে। এক নম্বরে, অর্থাৎ সবচেয়ে সুখী যে দেশ, সেটি হলো ফিনল্যান্ড। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে পৃথিবীর সেরা ধনী দেশ কাতার, সে রয়েছে ৯২ নম্বরে।
তালিকা অনুসারে বাংলাদেশে সুখ কমছে। আশপাশের দেশের অবস্থাও তথৈবচ। যেমন: ভারত ১৩০, মিয়ানমার ১৩৩ ও শ্রীলঙ্কা ১১৬ নম্বরে রয়েছে। তবে পাকিস্তান (৭৫) ও ভুটান (৯৭) কিছুটা স্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশে সুখ কেন কমছে তার উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের সুখের সংজ্ঞা হিসেবে যে ছয়টি উপাদানের কথা বলা হয়েছে, তার দিকেই নজর দিতে হবে। পত্রপত্রিকা পড়ে, রেডিও-টিভির টক শো শুনে কিন্তু মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষ আসলে তেমন সুখে নেই। সবাই এত রেগে আছি যে একে অপরের কথা শুনে ফস করে জ্বলে উঠি। পত্রপত্রিকা পড়েও বোঝা যায়, আমাদের শুধু সহনশীলতা নেই তা নয়, সহমর্মিতাও নেই।
এই প্রতিবেদন অনুসারে, সবচেয়ে সুখী প্রথম পাঁচটি দেশের চারটিই পশ্চিম ইউরোপের স্ক্যান্ডেনেভিয়ায়-ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ড। পাঁচ নম্বরে রয়েছে সুইজারল্যান্ড। গত বছর নরওয়ে এক নম্বর সুখী দেশ হিসেবে চিহ্নিত হলে টাইম ম্যাগাজিন তাদের এক প্রতিনিধিকে সে দেশে পাঠিয়েছিল এ কথা বুঝতে, ঠিক কী কারণে এই অঞ্চলের মানুষ এত সুখী। দেখা গেল, স্ক্যান্ডেনেভিয়ার সব দেশেই মানুষ একে অপরের প্রতি সহমর্মী, এসব দেশে সরকারও নাগরিকদের কল্যাণে অত্যন্ত তৎপর। এখানে মানুষ নিজ সমাজ ও পরিবেশ নিয়ে আস্থাবান ও আশাবাদী। এরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
তবে এ কথাও ঠিক, স্ক্যান্ডেনেভিয়ার প্রতিটি দেশের অধিকাংশ মানুষ বিত্তবান। মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে একদম প্রথম সারিতে রয়েছে তারা। সুখের সেটা একটা কারণ, তবে তার চেয়েও বড় কারণ এখানে লোকজন একে অপরের গলা টিপে ধরার জন্য মুখিয়ে নেই। কথাটা বলেছেন এই প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক অধ্যাপক জন হেলিওয়েল। তিনি জানাচ্ছেন, এখানে কখনো যদি নিজের মানিব্যাগ হারিয়ে ফেলেন, নির্ঘাত তা ফেরত পাবেন। এসব দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্রে নাগরিকদের জন্য রয়েছে বিস্তৃত সামাজিক নিরাপত্তাজাল। প্রত্যেকের রয়েছে স্বাস্থ্যবিমা, বেকারদের জন্য রয়েছে বেকার ভাতা। এমনকি অভিবাসীদের জন্যও রয়েছে ভাতার ব্যবস্থা। এ জন্য প্রত্যেক নাগরিককে বড় ধরনের আয়কর দিতে হয়। সবার কল্যাণ হবে-এ কারণে অধিকাংশ নাগরিকও সে নিয়মে আপত্তি করে না।
সুখ ব্যাপারটা ব্যক্তিগত হলেও তার অর্জন নির্ভর করে আমাদের পরিপার্শ্বের ওপর। আর সে জন্য আমাদের প্রত্যেককে কিছুটা হলেও উদ্যোগী হতে হবে। ড্যান বুয়েটনার নামের এক মার্কিন সমাজতাত্ত্বিক সম্প্রতি ব্লু জোনস অব হ্যাপিনেস নামের একটি বই লিখেছেন। অসংখ্য মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হয়ে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, আমরা নিজেরা কেমন সামাজিক জীবন যাপন করি, তার ওপর নির্ভর করে আমরা কে কতটা সুখী। ড্যানের পরামর্শ, ঘরে বসে না থেকে বাইরে বের হন, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ুন, অপরের বিপদে হাত লাগান, পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হোন, শুধু জীবনযাপন না করে জীবন ধারণের কোনো উদ্দেশ্য-পারপাস-খুঁজে নিন। আর হ্যাঁ, ব্যক্তিগত ব্যবহারে যেমন, আহারেও পরিমিত হোন।
শুধু এই প্রতিবেদন নয়, বিশ্বের সেরা মনস্তত্ত্ববিদেরা আমাদের সাবধান করে দিয়েছেন পৃথিবীতে অসুখী মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মানুষ একা হয়ে পড়ছে, একাকিত্ব থেকে জন্ম নিচ্ছে অবসাদ ও আত্মহননের চিন্তা। ব্যাপারটা এতটাই আশঙ্কাজনক রূপ নিয়েছে যে যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি ‘মিনিস্টার অব লোনলিনেস’ নামের একজন নতুন মন্ত্রীর নিয়োগ দিয়েছে।
জাতিসংঘ থেকেও ব্যাপারটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে এই সংস্থা ২০ জুনকে বিশ্ব সুখী দিবস হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন এই দিন ঘোষণার সময় বলেছিলেন, ‘সুখী থাকতে হলে সুখী হওয়ার চেষ্টা করতে হয়। একা নয়, সবাই মিলে। আমরা সবাই যদি সুখী জীবনের সাধারণ ভিত্তি বা কমন গুডস নির্মাণে যুক্ত হই, তাহলে অধিকাংশের জন্য সুখ অর্জন সম্ভব।’
যত সহজে মহাসচিব কথাটা বললেন, ব্যাপারটা তত সহজ নয়। আধুনিক ও নগরকেন্দ্রিক মানুষ স্বভাবতই স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক। অন্যের কথা ভাবার সময় কোথায় তার! কিন্তু একা একা সুখী হওয়া যায় না-এই সহজ সত্যটা বুঝলে হয়তো তারা নিজেদের কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে, অন্যের দিকে হাত বাড়াবে।
আরও পড়ুন...
আরও পড়ুন
-
সকাল ৯টার ট্রেন ছাড়েনি বেলা ২টায়ও, স্টেশনেই ঘুমিয়ে পড়েছেন ক্লান্ত মা-মেয়ে
-
বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকতে সাংবাদিকদের বাধা ব্যাংক লোপাটকারীদেরই উৎসাহিত করবে: নোয়াব সভাপতি
-
পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত
-
মোদির বিভাজনের রাজনীতির পেছনের কারিগর, যেভাবে উত্থান অমিত শাহর
-
ঝড়বৃষ্টি হতে পারে ৬ দিন ধরে, বলছে আবহাওয়া অফিস