
এখন এই বাদলের দিনে রাজশাহী নগর ভবনের সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় মনে পড়ে যাবে কণ্ঠশিল্পী অর্ণবের গাওয়া ‘কাঠগোলাপের সাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবি’ গানটির কয়েকটি চরণ। বৃষ্টিতে শহরের প্রকৃতিতে এই ফুলের জন্য মায়া যেন বেড়ে গেছে । ঘন সবুজ পাতার সঙ্গে ফুটে আছে কাঠগোলাপ। প্রায় ২০০ গাছে ফুটেছে ফুল।
কাঠগোলাপ আমাদের চেনা ফুল। তবে গুলাচি, কাঠচাম্পা, গোলকচাঁপা, গৌরচাম্পা, গুলঞ্চ নামেও পরিচিত। কাঠগোলাপ মধ্য আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপ এলাকার উদ্ভিদ। এশিয়ার নানান দেশে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে আগমন ঘটেছে। বাংলাদেশের মূলত শহর এলাকায় রোপণ করা হয়েছে। বিশেষ করে শহরের পার্ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে।
কাঠগোলাপ (Plumeria obtusa) ১০ থেকে ২৫ ফুট উঁচু হতে পারে। কাণ্ড নরম, ভঙ্গুর। পাতা বড়। শীতে পাতা ঝরে যায়। বসন্তে ফুল ফোটা শুরু হয়। দেশে আরও কয়েক প্রজাতির কাঠগোলাপ রয়েছে। প্রজাতিভেদে রঙের ভিন্নতা রয়েছে। কলম ও কাটিং থেকে বংশ বৃদ্ধি করা যায়। P. lutea জাতের গাছই রাজশাহীতে হয়েছে। তবে এই জাতের অল্প কিছু গাছও আছে।
রাজশাহী নগরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর থেকে সিঅ্যান্ডবি মোড় পর্যন্ত সড়ক বিভাজকে ২০১২ সালে প্রায় ২০০ কাঠগোলাপের গাছ লাগানো হয়। সড়ক বিভাজকের গাছগুলো ইতিমধ্যে শোভাবর্ধনকারী গাছ হিসেবে নগরবাসীর নজর কাড়ছে। দু-তিন বছর থেকেই এই গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে। এবার ফুল এসেছে সবচেয়ে বেশি। রাজশাহী নগরের গ্রেটার রোড দিয়ে হেঁটে বা গাড়িতে যাওয়ার সময় কেউ এই সৌন্দর্যের হাতছানিকে উপেক্ষা করতে পারবেন না। আষাঢ় মাসের প্রথম দিন থেকেই রাজশাহী শহরে দিনের কোনো না কোনো সময় বৃষ্টি হচ্ছেই। এত দিন এই গাছের ঘন সবুজ পাতা ধুলায় ধূসর হয়ে থাকত। এখন বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পাতার সবুজ রংটা যেন আরও উজ্জ্বল, আরও প্রাণপ্রাচুর্যের সম্ভার হয়ে উঠেছে।
রাজশাহী শহরের বেড়ে ওঠা তরুণী মায়িশা মাহজাবিন বলেন, ‘কাঠগোলাপ আমাদের অতিচেনা একটি গাছ।’ কিন্তু কণ্ঠশিল্পী অর্ণব কাঠগোলাপ নিয়ে ‘তোমার জন্য’ শিরোনামে গানটি করার পর তরুণ-তরুণীদের মধ্যে একধরনের মাতামাতি শুরু হয়। রাজশাহী শহরে এত কাঠগোলাপ ফুটে আছে যে গ্রেটার রোড দিয়ে যাওয়ার সময় গানটি গুনগুন না করে পারাই যায় না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের নির্দেশনায় এই গাছ লাগানো হয়েছিল, জানালেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ-উল-ইসলাম। নতুন আরেকটি সড়কে আরও প্রায় ৪০০ গাছ লাগানো হয়েছে। মাহমুদ-উল-ইসলাম বলেন, প্রায় সারা বছরই এই গাছে ফুল থাকে। বড় বড় পাতাগুলো সবুজ। শুধু শীতে পাতা ঝরার সময় ছাড়া সব সময়ই গাছগুলো শহরে সবুজ মায়া তৈরি করে রাখে।
তবে পরিবেশবিদদের কারও কারও ভাষ্য, কাঠগোলাপ দেশি কোনো বৃক্ষ নয়। রোপণের জন্য এটি সড়কের পাশে বা সড়ক বিভাজকে মানানসই হয় না। প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক সৌরভ মাহমুদ বললেন, ‘এটি মূলত শোভাবর্ধনের জন্য পার্কে, বাড়ির বাগানে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সীমিত পরিসরে লাগানো যেতে পারে। সড়ক বিভাজকে গুল্মজাতীয় দেশি উদ্ভিদ লাগানো ভালো। তেমনি আমাদের শহরের সড়কের পাশে দেশি প্রজাতির ফুলের ও পাখিবান্ধব গাছ লাগানো উচিত।’