
চালতা ফুল কি আর ভিজিবে
না শিশিরে
জলে নরম গন্ধের ঢেউয়ে?...
—জীবনানন্দ দাশ
ছেলেবেলাকার কথা। নানাবাড়ির এক পুকুরধারে একটি গাছ লম্বা পাতায় ছেয়ে গেছে। হালকা পোড়ানো ইট রঙের কাণ্ড। গাছটিতে উঠে পুকুরের জলে ঝাঁপ দেব, এটাই ছিল সেদিনের পরিকল্পনা। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও উঠতে পারিনি। কারণ, গাছটির কাণ্ড অনেক পিচ্ছিল, অনেকটা পেয়ারাগাছের মতো। কাণ্ডের গায়ে ছিল লাল পিঁপড়ে ও আলতো করে লেগে ছিল শুকনো বাকল। সেই প্রথম চালতাগাছ চেনা। গ্রামের কেউ একজন গাছটির নাম বলে দিয়েছিল।
দীর্ঘ লম্বা ও সবুজ পাতা। পুকুরের জলের কাছে নুয়ে পড়া ডালপালার রং, গাছভর্তি ফল, সেই স্মৃতি ভুলবার নয়। চালতা বৃহত্তর বঙ্গের তরু। নিচু এলাকা ও স্বাদু পানির এলাকায় ভালো জন্মে চালতাগাছ। চালতার বৈজ্ঞানিক নাম Dillenia indica। চালতা ফল এশীয় হাতিদের অতি প্রিয়। তাই এর ইংরেজি নাম Elephant apple। এ ফলের বীজের বিস্তারে এশীয় হাতিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে হাতির সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে বুনো পরিবেশে চালতাগাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
চালতার আচারের কদর বাংলাজুড়ে। কিন্তু রাজকীয় ও দৃষ্টিনন্দন চালতা ফুলের দিকে কজনই তাকায়? দীর্ঘ সবুজ পাতার মাঝে শুভ্র ও সুন্দর চালতা দেখতে খুবই মনোহারী। যদিও ঘন পাতার আচ্ছাদনে চালতা ফুল সহজেই চোখে পড়ে না। চালতা ফুলের সাদা ও নরম পাপড়িও ক্ষণস্থায়ী। দু-এক দিনেই ঝরে পড়ে। ফুলের প্রধান অংশগুলো দৃশ্যমান। সবার বাইরে থাকে পাঁচটি বৃতি। এই বৃতিই ফলে পরিণত হয়। বৃতির পরই পাঁচটি বৃহৎ পাপড়ি। পাপড়ির পরে একটি চাকতির মতো গোলাকার অংশে গর্ভদণ্ডকে ঘিরে অসংখ্য স্বর্ণালি পুংকেশর। গর্ভদণ্ডটি ঠিক মাঝখানে প্রায় ১৫টি গর্ভকেশর তারার মতো ছড়ানো থাকে।
চালতা কাঠের তৈরি নৌকা, গরুর গাড়ি গ্রামবাংলায় একসময় দেখা যেত। চালতা ফলে আছে ভিটামিন সি, ট্যানিন, শর্করা ও ম্যালক অ্যাসিড। ধীরে ধীরে চালতাগাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণ এলাকায় বিশেষত বৃহত্তর বরিশাল এলাকায় এখনো প্রচুর চালতাগাছ দেখা যায়।