
জার্মানির ড্রেসডেন শহরের গাছে গাছে কয়েক প্রজাতির পাখি নিয়মিত গান গাওয়া শুরু করেছে। নীল টিট, বড় টিট এবং কয়েক প্রজাতির ফিঞ্চ। বহুদিন পর রোদের কড়কড়া উত্তাপ পেয়ে তাদের মনে প্রেম ও ভালোবাসার জোয়ার বইছে যেন। ওদের এমন ছোটাছুটি ও দুষ্টুমি রুমের জানালা দিয়ে বেশ উপভোগ করছি। বসন্তের হাওয়া পেয়ে এসব পাখির গানের সুরও বদলে গেছে। বাসা বানানোর কাজ শুরু করেছে লম্বা লেজের কমন ম্যাগপাই।
খুব সকালে এখনো তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি থাকে। গরম কাপড় পরে বের হতে হয়। কিন্তু একটু বেলা হলেই শীতের ভাবটা থাকে না। পুরো শহরে বাইসাইকেল গিজগিজ করে। এমন রোদের দিনে বাইকিং এবং ঘাসের মাঠে রৌদ্রস্নান জার্মানদের খুব প্রিয়, দীর্ঘ শীতের পর এই সময়টাতে। আরও একটি বিষয় হলো, বসন্ত ও গ্রীষ্মের প্রকৃতি উপভোগ করার জন্য বাড়ির বাগানে তারা নানা রঙের ফুলের আগমন ঘটায় এবং বেশ উপভোগ করে। শহরে সদ্য ফোটা ফুলে ডানা মেলেছে প্রজাপতি।
বাড়ির আঙিনার প্রান্তে, সড়কের দুই পাশে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে খুবই মানানসই গাছ। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় চেরির বেড়ে ওঠা ও প্রস্ফুটন বিরল। চেরি ফল বেশ সুস্বাদু। পাখিরা এ ফল খেতে ভালোবাসে।
দুই সপ্তাহ ধরে রোদের বেশ আমেজ। এ রকম নিয়মিত রোদ, ঝকঝকে নীল আকাশ গত সাত মাসে দেখা যায়নি। তার সঙ্গে এমন এক আউলা বাতাস বইছে। কিন্তু সে হাওয়ায় একরকম মিষ্টি স্বাদ। দেহে শীত অনুভূত হলেও এক ভালো লাগার আবেশ ছুঁয়ে দেয়।
চারদিকে পাতাহীন তরুজগৎ রোদের আবেশ পেয়ে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। তবে সবুজ পাতা নয়। কেবলই ফুলের কুঁড়ি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বর্ণিল হয়ে উঠবে প্রকৃতি। ঘাসের সবুজে আসবে বনফুলের বর্ণধারা। তবে ইতিমধ্যে শহরের কোনো কোনো বাড়ির প্রান্তে ফুটেছে মায়াবী এক ফুল। যতবারই দেখি, মন ভরে না। তার প্রস্ফুটনের সৌন্দর্য, অপরূপ রং এবং মিষ্টি ঘ্রাণ বারবার কাছে টেনে নিয়ে যায়। এমন মায়াবী ফুলের সঙ্গ জীবনকে এমন এক ভালো লাগার অনুভূতি দেবে, যেটা কখনোই ভুলে যাওয়ার মতো নয়। পুরো গাছের শাখায় এমন ঘন প্রস্ফুটন খুবই আকর্ষণীয়। জাপান, চীন, কোরিয়া ও রাশিয়া থেকে এ চেরি ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের নানান দেশে। এ ফুলের সৌন্দর্য নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক কবিতা ও গল্প। দুই রঙের চেরি ফুল জার্মানিতে দেখা যায়। সাদা ও মিষ্টি গোলাপি। তবে আবেদনের গভীরতায় গোলাপি রঙের চেরি এগিয়ে। সাদাও বেশ রাজকীয়। পৃথিবীর অন্যতম সুখী জাতি জাপানিদের জাতীয় ফুল এ সাদা রঙের চেরি।
চেরি প্রুনাস গণের প্রজাতি। প্রুনাস সেরুলাটা প্রজাতিটির ফুল গোলাপি এবং প্রুনাস স্পেসিওসার রং সাদা। তা ছাড়া অনেক হাইব্রিড প্রজাতি রয়েছে। বাড়ির আঙিনার প্রান্তে, সড়কের দুই পাশে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে খুবই মানানসই গাছ। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় চেরির বেড়ে ওঠা ও প্রস্ফুটন বিরল। চেরি ফল বেশ সুস্বাদু। পাখিরা এ ফল খেতে ভালোবাসে।
পৃথিবীতে প্রকৃতির বুকে যত ফুল ফোটে, তার মধ্যে চেরি খুবই প্রভাব বিস্তারকারী একটি ফুল। মানুষ এ ফুল ফোটাকে ঘিরে চেরি উৎসব পালন করে। চেরি ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক জাপান ও কোরিয়ায় ভ্রমণ করেন।
হয়তো আমাদের বাংলাদেশের বনে এখনো বসন্তে ফোটা গাঢ় কমলা পলাশ, সিঁদুররাঙা পারিজাত এবং চিরচেনা লাল রঙের শিমুল ফুটে আছে। তারাও চেরি মতোই মায়াবী ও ভালোবাসার।
সৌরভ মাহমুদ, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক