
আমাদের সমতলের গাছপালা নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখির কারণে সাধারণ মানুষ আজকাল অনেক গাছই চেনেন। গাছপালার কদরও করেন। শরতের এক দিনে রাঙামাটির এক পাহাড়ে উঠেছি। তখন সেপ্টেম্বর মাস। কড়া রোদ, পাহাড়ে সবুজের গাঢ় আবেদন। আমাদের পাহাড়ি জনপদের সৌন্দর্যকে মনে ধরে রাখার জন্য শরৎ ও হেমন্ত প্রকৃত সময়। পাহাড়চূড়া থেকে রাঙামাটি শহরকে দেখব বলে সেখানে ওঠা। কাপ্তাই লেকের বুকে ছোট-বড় টিলা ও পাহাড় নিয়ে এক ছোট্ট শহর রাঙামাটি।
পাহাড় বেয়ে নিচে নামার সময় এক বুনোফুল দেখলাম। সবুজের মাঝে গোলাপি রংতুলি এঁকে উঁকি দিচ্ছে। ছোট ছোট শাখায় অনেকগুলো ফুল। অনেকটা সিম ফুলের আকৃতি। কয়েকটি ছবি তুলে ফেললাম তখনই। নাম তার বন-নীল। আদি আবাস পূর্ব ভারত। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়া, উষ্ণমণ্ডলীয় আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায়। বহুবর্ষজীবী বুনো আগাছা। তবে আগাছা হলেও এ উদ্ভিদের অর্থনৈতিক ও ভেষজ গুণ অনেক। সাধারণত পতিত জমি, পাহাড়ের গায়ে, সড়কের ধারে জন্মে। তবে অনেক দেশে জমিতে সারের বিকল্প হিসেবে চাষ করা হয়। কারণ এ উদ্ভিদ বায়বীয় নাইট্রোজেন সংবন্ধন করতে পারে, যা জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।
উদ্ভিদ রক্ত পরিষ্কারক, কৃমিনাশক, আলসার, অ্যাজমা চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। পাতা অন্ত্রীয় টনিক, ক্ষুধাবর্ধক, ফুসফুস ও বক্ষব্যাধির সমস্যায় কার্যকর। পেটের অসুখ ও ডায়রিয়ায় ব্যবহার করা হয়। গেঁটেবাত, পাইলস, শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। বীজের তেল চুলকানি, অ্যাকজিমা ও চর্মরোগের চিকিৎসায় কার্যকর। তবে এ গাছে সীমিত পরিমাণ বিষাক্ত উপাদান Tephrosin আছে, যা মাছ ধরতে ব্যবহার করা হয়। এটি মাছকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। কিন্তু এ বিষাক্ত উপাদান স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর নয়, বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। (সূত্র: এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ)।
শাখা-প্রশাখা ছড়ানো হালকা ঝোপালো উদ্ভিদ। পত্র ৫-১০ সেমি লম্বা, পত্রক ১১-২১টি, ছোট, শিরাযুক্ত। ফল পড ৪-৬ সেমি লম্বা, রেখাকার, আংশিক বক্র, ৫-৯ বীজী। ফুল ফোটে শরৎ থেকে হেমন্তে। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় এ আগাছা দেখেছি। Fabaceae পরিবারের এ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Tephrosia purpurea। ইংরেজি নাম Wild Indigo, Purple tephrosia, Fish poison।
আবাস ধ্বংসের ফলে প্রজাতিটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। রোদের আলো পড়ে—এমন ছোট ঝোপ ও বনাঞ্চলে জন্মে এটি। বীজ থেকেই বংশবৃদ্ধি ঘটে। ভেষজ উপাদান ও কৃষিজমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ আগাছাটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যেতে পারে।