ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে শহর। এরই মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। টেপাখোলা, ফরিদপুর, ২৬ ডিসেম্বর
ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে শহর। এরই মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। টেপাখোলা, ফরিদপুর, ২৬ ডিসেম্বর

কুয়াশার প্রকোপ থাকবে আরও পাঁচ দিন

ঘন কুয়াশার মধ্যে দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় দিনের বেলায় সড়কে যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। তাপমাত্রা কমে আসায় তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কুয়াশার মধ্যে মেঘনা নদীতে দুই যাত্রীবাহী লঞ্চের সংঘর্ষে মারা গেছেন চারজন।

এ কুয়াশার মধ্যে দেশের সাত জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। চুয়াডাঙ্গা জেলাও এর মধ্যে একটি। গতকাল শুক্রবার এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকাগামী পরিবহনের চালক মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪০ বচর ধইরে গাড়ি চালায়। এবেড্ডা কুয়াশা এট্টু বেশি। ঘন কুয়াশার কারণে রাতির বেলা অনেক ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতি হচ্চে। ঠিক সুমায় পৌঁচানো যাচ্চে না। দিন যত বাড়চে, শীত আর কুয়াশার জন্যি কষ্ট বাড়চে।’

শীতের তীব্রতায় কষ্ট পাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষও। গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গা সদরে সড়কের পাশে রোদ পোহাচ্ছিলেন জাহানারা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ্যাতো শীতি মানুষ কীভাবে বাঁচে? পাতলা কাপুড় গায় দি রাতি ঘুম আসে না। রোদও ঠিকমতো ওটে না যে রোদ পুয়াবো। জাড়ে খুপ কষ্ট পাচ্চি। শুনচি সরকার নাকি কোম্বল দেচ্চে। আমাগের পইযন্ত আসপে কি না জানিনে।’

কী বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, হালকা থেকে ঘন কুয়াশার প্রকোপ অব্যাহত থাকবে আরও পাঁচ দিন। এতে সাময়িক ব্যাহত হতে পারে নৌ, সড়ক ও বিমান চলাচল। জানুয়ারির শুরু থেকে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকালের বুলেটিনে বলা হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর—এ পাঁচ দিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা কোনো কোনো এলাকায় দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এ ছাড়া দেশের সাত জেলা—চুয়াডাঙ্গা, যশোর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারীর ওপর দিয়ে বয়ে চলা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে বুলেটিনে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার অঞ্চলগুলোতে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

২৬ ডিসেম্বর সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৯.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গায় ৯.৬ ডিগ্রি, গোপালগঞ্জে ৯.৮ ডিগ্রি এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে ১০.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, এ কুয়াশা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে। জানুয়ারি মাসের শুরুতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।

চার কারণে কুয়াশা বাড়ছে জানিয়ে আবুল কালাম মল্লিক বলেন, দেশের অভ্যন্তরে জলাধার, বিল ও হাওর থেকে উৎপন্ন কুয়াশা, বিকিরণজনিত কুয়াশা, পাহাড়ের ভাঁজে সৃষ্ট কুয়াশার সঙ্গে ভারত থেকে দেশের উত্তর–পশ্চিম দিয়ে প্রবেশ করা বায়ুতাড়িত কুয়াশার কারণে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ কুয়াশা মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে থাকায় সূর্যের আলো আসতে পারছে না। ফলে ঠান্ডার অনুভূতিও তীব্র হচ্ছে।