শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজা পড়ান তাঁর বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা, ঢাকা; ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজা পড়ান তাঁর বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা, ঢাকা; ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

ওসমান হাদির ভাই

প্রকাশ্যে গুলি করে পার পেয়ে যায়, এর চেয়ে লজ্জার কিছু নাই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলি করার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ ও দুঃখের কথা জানিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, প্রকাশ্যে গুলি করে যদি খুনিরা পার পেয়ে যায়, এর চেয়ে লজ্জার কিছু নাই।

আজ শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওসমান হাদির জানাজা পড়ান তাঁর বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। জানাজার আগে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘শহীদ ওসমান হাদি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এই বাংলাদেশের ১৮-২০ কোটি মানুষের কাছে একটি মেসেজ (বার্তা) দিয়েছিলেন—কীভাবে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হয়।’

ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে তাঁর বড় ভাই বলেন, ‘সাত থেকে আট দিন হয়ে গেল; দিবালোকে, প্রকাশ্যে রাজধানী ঢাকায় জুমার নামাজের পরে খুনি যদি প্রকাশ্যে গুলি করে পার পেয়ে যায়, এর চেয়ে লজ্জার আমাদের আর কিছু নাই। (খুনি) যদি বর্ডার পার হয়ে যায়, পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা সময়—তারা কেমন করে গেল? এই প্রশ্ন জাতির কাছে রেখে গেলাম।’

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই। আমার ভাই ওসমান হাদি শহীদ হয়েছে। ওর শহীদি তামান্না (আকাঙ্ক্ষা) ছিল। আপনারা ওর বক্তব্য শুনেছেন, আপনারা শহীদ ওসমান হাদির টক শো শুনেছেন। ও সব সময় শহীদের তামান্না করত। হয়তো আল্লাহ তাআলা ওর সেই শহীদ নসিব করে দিয়েছেন। কিন্তু আপনাদের কাছে আমি এই ঋণ কোনো দিন ছাড়ব না—আমার ভাই শরিফ ওসমান হাদির বিচার যেন প্রকাশ্যে এই বাংলার জমিনে আমরা দেখতে পারি।’

হতাশা প্রকাশ করে ওসমান হাদির বড় ভাই বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, সাত-আট দিন হলো, এখন পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারলাম না। এই দুঃখে কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে!’

এ সময় আবেগাপ্লুত কণ্ঠে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা ওসমান হাদির জন্য দোয়া করি; আমরা ওর সন্তান ও ওর স্ত্রীর জন্য দোয়া করি। ওর সন্তানের মাত্র আট মাস বয়স। গতকাল (শুক্রবার) যখন ওর কাছে নিয়ে আসছে, সবাই বলছে বাবাকে দেখাবে। আমি বললাম, কী লাভ হবে? ও তো কোনো দিন ওর বাবার চেহারা, কথা বলতে (মনে করতে) পারবে না। ওর ছেলে আর কোনো দিন জানবে না—আমার বাবা কেমন ছিল।’

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে ওসমান হাদির ভাই আরও বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার ওসমান হাদি আর ফিরে আসবে না। ওসমান, তুমি দেখে যাও—লক্ষ লক্ষ জনতা, তৌহিদি জনতা তোমার জন্য পাগল। ওসমান, তুমি মরো নাই; তুমি আমাদেরকে পাগল বানিয়ে দিয়ে গেছ।’

জুলাই আন্দোলনের মুখ ওসমান হাদি (৩২) গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগরে দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিন দিন পর নেওয়া হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। তবে চিকিৎসকদের সব প্রয়াস ব্যর্থ করে গত ১৮ ডিসেম্বর ওসমান হাদির জীবনাবসান ঘটে।

কফিনবন্দী হয়ে গতকাল শুক্রবার দেশে ফেরেন জুলাই আন্দোলনের এই সৈনিক। শনিবার বেলা দুইটার পরে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ লাখো মানুষ অংশ নেন। বিকেল চারটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে ওসমান হাদির দাফন সম্পন্ন হয়।