
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই)। গতকাল শুক্রবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অস্ট্রিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন। সংগঠনটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে।
আইপিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২০ জনের বেশি সাংবাদিকের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
১৮ ডিসেম্বর রাতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয়ের ভেতরে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীরা কয়েক ঘণ্টা আটকা পড়েন। পরে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাঁদের উদ্ধার করেন।
ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েক দিন পর শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। ওই আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিলেন হাদি। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হামলায় দুটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে সাময়িকভাবে প্রকাশনা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। ডেইলি স্টারের ৩৫ বছর ও প্রথম আলোর ২৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো তাদের প্রকাশনা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।
অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ডেইলি স্টার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার ইতিহাসে এটি কালো দিন।’ অতীতেও ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো বারবার হুমকির মুখে পড়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে সংবাদমাধ্যমের নিরাপত্তা জোরদার করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
আইপিআইয়ের অ্যাডভোকেসি পরিচালক অ্যামি ব্রুইলেট বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি দৈনিকের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। সেই সূত্রে এটি গণতন্ত্রের ওপরও আঘাত।’
ব্রুইলেট আরও বলেন, ‘আগে থেকেই স্বাধীন গণমাধ্যমের পরিবেশ ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশে এই সহিংস ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে দেবে। আইপিআই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে জোর আহ্বান জানাই—এই নৃশংস হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনা হোক। স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হোক।’