Thank you for trying Sticky AMP!!

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

১৪ মে কলকাতা থেকে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় গ্লোবাল ইসলামি (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলায় দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এই দুই সাক্ষী হলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মামুনুর রশীদ ও দুদকের সাবেক সহকারী পরিচালক আমির হোসেন। ১৯ অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম।

গত ৮ সেপ্টেম্বর পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ মামলায় পি কে হালদারসহ ১০ আসামি পলাতক, কারাগারে ৪ জন। আজ বৃহস্পতিবার শুনানি উপলক্ষে কারাগারে থাকা পি কে হালদারের মামাতো ভাই শঙ্খ ব্যাপারী, ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা ও অবন্তিকা বড়ালকে আদালতে হাজির করা হয়। অভিযোগ গঠনের সময় আসামিরা নিজেদের নিরপরাধ দাবি করেন। তাঁরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান।

পলাতক অন্য আসামিরা হলেন পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার, সহযোগী অমিতাভ অধিকারী, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, রাজীব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ মামলায় গত জানুয়ারিতে পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, পি কে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯৩৩ কোটি টাকার জমি, ফ্ল্যাট ও হোটেল কিনেছেন। এ ছাড়া কানাডায় পাচার করেছেন প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

দুদক বলেছে, পিরোজপুরের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান পি কে হালদার মাত্র ১০ বছরের (২০০৯-২০১৯) ব্যবধানে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। তাঁর বৈধ আয়ের পরিমাণ মাত্র ১২ কোটি টাকা। দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার নামে-বেনামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। এই টাকা আর ফেরত না আসায় প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।

প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। টাকা বের করার আগে শেয়ার কিনে এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন পি কে হালদার। ২০২০ সালের শুরুতে এই আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয়। অবশ্য এর আগেই ২০১৯ সালের শেষ দিকে দেশ ছাড়েন পি কে হালদার।

গত মে মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে পি কে হালদারসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে দেশটির আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা ইডি। গ্রেপ্তারের আগে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পি কে হালদারের প্রাসাদসম বাড়িসহ অনেক সম্পদের সন্ধান পায় ইডি।

গত ৭ জুন ইডি দেশটির আদালতকে জানায়, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পি কে হালদারসহ তাঁর সহযোগীদের ৮৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে তারা। পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের ৩০০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়ার কথাও আদালতকে জানিয়েছে ইডি। পি কে হালদার এখন ভারতের কারাগারে। তাঁকে হস্তান্তরের জন্য দিল্লিকে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা।

পি কে হালদারের পলাতক অবস্থায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডীয় ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাঁর ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা প্রায় ৮০ কোটি টাকা।

পি কে হালদারের জন্ম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামে। বাবা প্রয়াত প্রণনেন্দু হালদার ও মা লীলাবতী হালদার। তাঁর মা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

পি কে হালদার ও তাঁর ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার—দুজনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে দুজনই ব্যবসায় প্রশাসনের আইবিএ থেকে এমবিএ করেন। পাশাপাশি চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট (সিএফএ) সম্পন্ন করেন পি কে হালদার।

Also Read: কে এই পি কে হালদার, কী তাঁর ‘কীর্তি’