
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ শনিবার রাত ১২টায়। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁদের প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই নির্বাচন।
গত বৃহস্পতিবার ছিল বড়দিনের ছুটি। গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং ভর্তি পরীক্ষা থাকায় ক্যাম্পাসে প্রার্থীদের সরাসরি প্রচারণার সুযোগ কম ছিল। আজ সকালে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের পরীক্ষা থাকায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল তুলনামূলক কম। এ কারণে দিনের মূল প্রচারণা শুরু হয় বিকেল থেকে।
বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারণা শুরু করেন ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব।
এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে। অতীতের গ্লানি পেছনে ফেলে সুস্থ ও ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক চর্চা দরকার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যার সমাধানের পথও আছে।
‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব বিবেচনায় জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালে ৪০ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্বাচিত হলে স্বাস্থ্যবিমা চালুসহ আরও হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে চিকিৎসাসেবা সুলভ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
একই প্যানেলের কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, সময় কম হলেও সব শিক্ষার্থীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া ও পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে। সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রত্যাশা জানান তিনি।
অপর দিকে স্বতন্ত্র প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী মোসা. উম্মে মাবুদা নওয়াব ফয়েজুন্নেসা চৌধুরানী হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
নারী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে উম্মে মাবুদা বলেন, মেয়েদের কাছ থেকে তিনি ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লোকবল কম ছিল, তবু তিনি চেষ্টা চালিয়ে গেছেন—এর ফল পাবেন বলে তিনি আশাবাদী।
ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী আবদুল আলিম আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। কোথাও না পৌঁছাতে পারলে অনলাইনে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত তাঁরা শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে—এ বিষয়ে আশা প্রকাশ করলেও কিছু শঙ্কা আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় ছাত্রশক্তি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী শাহীন মিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তাঁদের মধ্যে উৎসাহ দেখেছি এবং সমস্যার কথা শুনেছি। সমাধানের চেষ্টাও করছি। ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।’
স্বতন্ত্র প্যানেলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী আবিদ হাসান বাঁধন অভিযোগ করে বলেন, রাজনৈতিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণে বৈষম্য দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের প্যানেলের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় কমিশনের কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
এই প্যানেলের কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী এ এন এম মিনহাজুল হক বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সবকিছু একাই সামাল দিতে হচ্ছে। তবু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। তবে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ আছে। প্রার্থীরা নিয়মিত আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, নির্বাচন কমিশন সেখানে দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।’
নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, জকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের বিভিন্ন পদে প্রার্থীর সংখ্যা ১৫৭ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ১৭ জন। শেষ সময়ে ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী এ কে এম রাকিবকে সমর্থন জানিয়ে তিনজন প্রার্থী সরে দাঁড়ান। পাশাপাশি আটজন প্রার্থী বিভিন্ন পদ থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।