
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি সবুজ বিস্তৃত চাষের জমির দুপাশে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে অগণিত সাউন্ড বক্স এবং মাইক। উভয় পাশ থেকেই মাত্রাতিরিক্ত আওয়াজে সেই বক্সে গান বাজানো হচ্ছে।
‘খবর+’ নামে ফেসবুক পেজের আপলোড করা ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলাকাবাসীর দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সাউন্ড স্পিকার ভাড়া করে গান শোনাচ্ছে।’
Gen Z Club নামে অপর এক ফেসবুক পেজেও একই ভিডিও ‘এলাকাবাসীর দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সাউন্ড স্পিকার ভাড়া করে গান শোনাচ্ছে’ এই শিরোনামে আপলোড করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনার খোরাক হয়েছে।
Chittagong Insiders News তাদের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি আপলোড করে লিখেছে, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলাকাবাসীর দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সাউন্ড স্পিকার ভাড়া করে গান শোনাচ্ছে। অবশেষে টেঁটাযুদ্ধ বাদ দিয়ে সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে লড়াই করছে, এটাই সান্ত্বনা।’
তবে প্রথম আলোর ফ্যাক্ট চেকে দেখা যাচ্ছে, ভাইরাল ভিডিওটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নয়। এটি বাংলাদেশেরই নয়। বরং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার গোবিন্দপুর এলাকার ঘটনা এটি।
প্রথমে দাবি করা ভিডিওটি ইনভিডে নিয়ে কি–ফ্রেমে ভাগ করে গুগল লেন্সে সার্চ করা হলে ওই একই ভিডিও Robiul Funny নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যায়।
সেই ভিডিওটি এ বছরের ১৭ জানুয়ারি আপলোড হয়েছিল। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘মুর্শিদাবাদ VS নদীয়া open a competition’। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোনো কথাই নেই।
বিষয়টি আরও নিশ্চিতের জন্য একই চ্যানেলেই আপলোড হওয়া অন্য কয়েকটি ইউটিউবে শর্ট পাওয়া যায়, যেখানে একই ধরনের সাউন্ড বক্স থাকা বেশ কয়েকটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে।
তেমনই একটি ভিডিওতে একটি সাউন্ড বক্সের গায়ে ‘সুপার সাউন্ড’ লেখাটি দেখা যায়। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর এবং ঠিকানা ‘নাটনা, পূর্ব পাড়া, নদীয়া’ লেখা রয়েছে। এই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘পিকনিক 2025 সাল’।
‘সুপার সাউন্ড’–এর বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখা যায় যে গুগল ম্যাপে নদীয়ার করিমপুরে নাটনার অন্তর্গত পূর্ব পাড়া এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থান।
ঘটনাটি সার্চ করতে গিয়ে একই সঙ্গে ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট মেলে, যা শাহিন শেখ নামের এক যুবক ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর তুলেছিলেন। সেই পোস্টে সুপার সাউন্ডের স্পিকারের একাধিক ছবিতে ওই একই ফোন নম্বর দেখা যাচ্ছিল, পাশাপাশি পোস্টের ক্যাপশনেও ওই একই নম্বর দেওয়া ছিল যোগাযোগের জন্য।
এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে কোনোভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে এর কোনো সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে মুর্শিদাবাদের গোবিন্দপুরের পিকনিকের ভিডিওটিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বলে ছড়ানো হচ্ছে।