‘ঐতিহাসিক বটতলায় ডাকসু প্রার্থীদের ভাবনা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তির লড়াই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা
‘ঐতিহাসিক বটতলায় ডাকসু প্রার্থীদের ভাবনা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তির লড়াই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা

আলোচনা সভা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ফেরাতে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক নেতারা বলেছেন, রাজনৈতিক দলের পক্ষ হয়ে কাজ করলে শিক্ষার্থীরা ছাত্রনেতাদের গ্রহণ করবেন না। তাঁদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ফেরাতে কাজ করা।

অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচনে এবারের প্রার্থীরা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখল, গণরুম এবং গেস্টরুমের মতো অপসংস্কৃতি (অতিথিকক্ষে আদবকায়দা শেখানোর নামে নির্যাতন) ফেরার সুযোগ নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের ‘ঐতিহাসিক বটতলায় ডাকসু প্রার্থীদের ভাবনা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তির লড়াই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতারা এ কথাগুলো বলেন। ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে এর আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। মঙ্গলবার ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে।

ডাকসুর এবারের নির্বাচনে ১০টির মতো প্যানেল গঠন করা হয়েছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন। ২০১৯ সালে ডাকসুতে বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছিল। এবার ডাকসু নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক আয়োজিত আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে দেখতে চান। তাঁর প্রত্যাশা ডাকসুর নতুন নেতৃত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আবারও আগের গৌরবের জায়গায় নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, দেশে নির্বাচন নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। সংস্কার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই বিতর্কের জবাব কোনো শ্রমিক দিতে পারবে না, কোনো কৃষক দিতে পারবে না; এই বিতর্কের জবাব দিতে পারবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান আগের মতো থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মেধাবী ছাত্ররাই বলতেন পিআর (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন) ভালো নাকি খারাপ। বাকিদের তা মানতে হতো।

১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালের ডাকসু নির্বাচনে পরপর দুই মেয়াদে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, দেশে গত ১৫ বছরে চাকরির সংস্থান হয়নি। এমনকি বিগত এক বছরেও চাকরি বাড়েনি। কী করলে চাকরি পাওয়া যাবে সেই কথা, সেই পথ দেখাতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। ডাকসুর কাছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এমন প্রত্যাশাই তাঁর।

ডাকসুর ভিপি থাকাকালীন ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিচারণা করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখন বিশুদ্ধ পানি পান করিয়ে ভোট পাওয়া যায়। তাঁর সময়ে তিনি অনাবাসিক ছাত্রদের যাতায়াতে বাসের ব্যবস্থা করে হাততালিও পাননি। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যত বড় বড় অর্জন, সেটা পানি পান করিয়ে, লাইব্রেরিতে বই দিয়ে বা হলে খাবারের মান উন্নত করে আসেনি। এসেছে সমাজের মুক্তির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।

জুলাই অভ্যুত্থানের উদাহরণ টেনে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সব কটি রাজনৈতিক দল ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করেছে। কিন্তু সরকার নড়েনি। ছাত্ররা যখন নেমেছে, তখন সরকার নড়েছে।

ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন (১৯৮৯) জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন। তিনি আলোচনা সভায় বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ছাত্রসংগঠন অতীতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেছে, ছাত্ররা তাদের গ্রহণ করেননি। এমনকি ছাত্র আন্দোলন থেকে নতুন যে দলগুলো হয়েছে, তাদেরও ছাত্রদের অনেকে পছন্দ করছেন না। ফলে এবারের ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বেশি। তিনি মনে করেন, তাঁরাই নির্বাচিত হবেন, যাঁরা রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আলোচনা সভায় সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন। ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ক্ষমতার মুখের ওপর না বলতে পারার মতো জোর অর্জন করতে হবে। পদের জন্য লোভ করলে সেই জোর আর থাকে না। কণ্ঠস্বর আসতে হবে, কিন্তু ঘৃণার স্বর, অন্যকে ছোট করার স্বর, বৈষম্যের স্বর আসা যাবে না। লেজুড়বৃত্তি বন্ধ করতে হবে। এটি অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, শুধু সিনেট (বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম) নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

এর আগে আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে নিজেদের ভাবনাগুলো তুলে ধরেন ডাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। এ সময় ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম বলেন, তাঁদের দ্বারা রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির পুনরুত্থান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একজন শিক্ষার্থীকে পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবেন তিনি, যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর এক হাতে থাকবে কলম, অন্য হাতে থাকবে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার অঙ্গীকার।

বামপন্থী ৭ সংগঠনের যৌথ প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসু বলেন, নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক, বাংলাদেশের মাটি থেকে মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলার চেষ্টা হলে, শহীদের স্মৃতিকে অবজ্ঞা করার চেষ্টা হলে, একাডেমিক স্বাধীনতার নামে বুদ্ধিবৃত্তিক তর্কের মধ্য দিয়ে ১৯৭১-কে ম্লান করার প্রয়াস তাঁরা সব সময় প্রতিহত করবেন। এটিই তাঁদের প্রতিশ্রুতি।

এ সময় নিজেদের ভাবনা তুলে ধরেন সম্মিলিত ছাত্র ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী জান্নাতি বুলবুল, ছাত্র ফেডারেশনের এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী আরমানুল হক, রাষ্ট্রচিন্তার জিএস প্রার্থী মোতাসিম বিল্লাহ মাসুম প্রমুখ।