Thank you for trying Sticky AMP!!

পুঁজি পাচারের তুলনায় আইএমএফের অর্থ তেমন কিছুই না

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

আইএমএফের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার একটা সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে আর্থিক খাতের নিয়মানুবর্তিতা বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে। অতীতেও আমরা অনেকগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছি, যেগুলো নিজেরা করতে গেলে রাজনৈতিক বিরোধিতা আসে। কিন্তু আইএমএফের বরাত দিয়ে সেগুলো করা অনেক সহজ।

আবার আইএমএফের অধিকাংশ পরামর্শ আসলে আমাদের আগেই করা উচিত ছিল। এখন সেসব পরামর্শ আইএমএফের কারণে যদি করা যায়, আবার উপরি যদি কিছু অর্থও পাওয়া যায়, সেটা অবশ্য আমাদের জন্য ভালো। কিন্তু যে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, তার তুলনায় পুঁজি পাচারের কারণে অর্থনীতিতে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আমরা যদি বিদেশে পুঁজি পাচার বন্ধ করতে পারতাম, তাহলে সে তুলনায় আইএমএফের অর্থ তেমন কিছুই না।

Also Read: আগামী দু-এক বছর দুর্ভোগ সইতে হবে

অতীতের অভিজ্ঞতা হলো অনেক সময় আইএমএফের শর্তগুলো পূরণ করা যায় না বলে মাঝখানে কিস্তি বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং প্রাথমিকভাবে যেটুকু পাওয়া গেল, সেটাই লাভ। আর রাজনৈতিকভাবে যতটা সম্ভব সেটুকু সংস্কার করা গেল। তবে সংস্কার প্রস্তাব বা পরামর্শের মধ্যে অর্থ পাচারের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো নেই। বরং সুদের হার, তারল্য বা ব্যাংকিং খাতে কিছু নিয়মানুবর্তিতার কথা শর্তের মধ্যে থাকে। আসলে আইএমএফও খুব ভালো করেই জানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এগুলো করলে কোনো লাভ হয় না, আবার তাদেরও একটা আমলাতন্ত্র আছে। তারা কাগজ-কলমে বাস্তবায়ন বা শর্ত পালন দেখাতে পারলেই সন্তুষ্ট হয়। কিন্তু আমরা ব্যাংকিং খাতের সংস্কার কত দূর করতে পারব, এটা সম্পূর্ণভাবে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের ওপর নির্ভর করে।

Also Read: সুদের হার ও ডলারের দরের ব্যবস্থাপনা কেমন হবে

আসলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা এত বেশি বিস্তৃত হয়ে গেছে, এত বেশি সংক্রামক হয়ে গেছে যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেও হঠাৎ করে তা মেরামত করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, আর্থিক খাতের সমস্যা সংক্রামক ব্যাধির মতোই। আরেকটা বিষয় হলো স্বার্থগোষ্ঠীর চাপে আর্থিক খাতের যেসব অর্জন ছিল, তা আমরা হারিয়েছি এবং পেছনের দিকে গিয়েছি। আশির দশকে ব্যক্তি খাতে যখন ব্যাংক দেওয়া হলো, তখন আমরা নিয়মনীতি না বানিয়েই ব্যাংক অনুমোদন দিয়ে ভুল করেছিলাম। আর পরে আমরা আরও ভুল করেছি। তখন যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছিল যে একটি কোম্পানি আরেকটা কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করতে পারে। এটাও আসলে একটা খোঁড়া যুক্তি।

একটা কোম্পানি তো আরেকটা কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করবেই, বিদেশেও তা করা হয়। যেটা বলা হয়নি, সেটা হলো অধিগ্রহণ করতে পারে শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার কিনে, কিন্তু তার আগে একচেটিয়া ব্যবসাবিরোধী আইন (অ্যান্টি মনোপলি ল) থাকতে হয়। মনে রাখা দরকার, একচেটিয়া ব্যবসা বা একচেটিয়া মালিকানার বিরুদ্ধে আর্থিক খাতে অনেক বেশি আইন থাকতে হয়। অথচ সেখানে আমরা এক পরিবারের মালিকানার ক্ষেত্রে যে নিয়ম করেছিলাম, সেগুলো বরং আরও শিথিল করা তো হয়েছেই, এমনকি কতগুলো ব্যাংক অধিগ্রহণ করে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগও আমরা করে দিয়েছি। সুতরাং সংস্কার করার অনেকগুলো জায়গা রয়েছে।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থনীতিবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা, সাবেক ব্যাংক সংস্কার কমিটির প্রধান।