
দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগের অবস্থা এক দশক ধরে খুবই খারাপ। এসব প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। এত খারাপ প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও হাতে গোনা তিন-চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান সফলতার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যে অন্যতম আইডিএলসি ফাইন্যান্স।
গত এক দশকে বেশির ভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান যখন ধুঁকছে, তখন আইডিএলসি নতুন নতুন সেবা চালু করেছে। মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ শুরু করেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির সেবাকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ লাখ গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটিতে সঞ্চয়ী হিসাব খুলেছেন। যদিও নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ১০ হাজার আমানত গ্রাহক ও ৩০ হাজার ঋণ গ্রাহক পেয়েছে।
অর্থায়নে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পকে প্রাধান্য দেওয়ায় পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই রেটিংয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক বছর ধরে এই তালিকা প্রকাশ করছে। এবারের তালিকা করা হয়েছে ২০২৪ সালের তথ্যের ভিত্তিতে। সারা দেশে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের (এসএমই) অর্থায়নের জন্য। আইডিএলসির অপর নাম হয়ে উঠেছে এসএমই ফাইন্যান্সিং।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, আইডিএলসি ফাইন্যান্সের আমানত ও ঋণ প্রতিবছর বাড়ছে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফায় ২০০ কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে। দেশি ও বহুজাতিক একাধিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে যাত্রা শুরু করে আইডিএলসি ফাইন্যান্স। আইডিএলসি ফাইন্যান্সের রয়েছে তিন সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো আইডিএলসি সিকিউরিটিজ, আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট ও আইডিএলসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট। আইডিএলসি ফাইন্যান্সের মতো সহযোগী প্রতিষ্ঠান তিনটিও নিজ নিজ ক্ষেত্রে সেরার তালিকায়।
আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ২৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সিটি ব্যাংক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের হাতে। আর ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রান্সক্রাফট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ল্যাম্পসের হাতে। সাধারণ বীমা করপোরেশনের হাতে রয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ার, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের হাতে আছে সাড়ে ৫ শতাংশ শেয়ার। বাকিটা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠানগুলো শুরু থেকেই আর্থিক খাতের পেশাদার ও দক্ষ ব্যবসায়ীদের পর্ষদে মনোনয়ন দিয়ে আসছে। পাশাপাশি দক্ষ কর্মকর্তারাও শীর্ষ পদগুলোতে রয়েছেন। ফলে আর্থিক খাতের চরম দুরবস্থার মধ্যেও আইডিএলসি ফাইন্যান্স অনন্য উচ্চতায় রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে আইডিএলসির আমানত ছিল ৭ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয় ৮ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। গত বছর আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৭২০ কোটি টাকায়। অপর দিকে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ ছিল ৯ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকায়। আর গত বছর শেষে আইডিএলসির ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়। গত বছর শেষে টেকসই খাতে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ঋণ ছিল ৩ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন করেছে ৫৮৫ কোটি টাকা ও টেকসই অর্থায়ন করেছে ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গড় খেলাপি ঋণ যেখানে ৩৫ শতাংশ, সেখানে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণের হার সাড়ে ৪ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইডিএলসি গ্রুপ আর্থিক খাতে নানা ধরনের নতুন আর্থিক সেবার রূপকার, যা খুদে সঞ্চয় ও বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে বিকাশের মাধ্যমে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের মাসিক সঞ্চয় সুবিধা নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। এখন বিকাশ অ্যাপের গ্রাহকেরা ৫০০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা কিস্তিতে সঞ্চয়ী আমানত বা ডিপোজিট পেনশন স্কিম (ডিপিএস) খুলতে পারছেন আইডিএলসিতে। আগে যা ছিল সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ বিকাশ গ্রাহক আইডিএলসি ফাইন্যান্সে সঞ্চয়ী হিসাব খুলেছেন। এখন এই খাতে সঞ্চয় স্থিতি প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঋণ ও সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের উচ্চ সুদের কল্যাণে গত বছর আবারও ২০০ কোটি টাকার মুনাফার ঘরে ফিরেছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স। ২০২১ সালের পর কোম্পানিটির মুনাফা আবারও দ্বিশতকের ঘর ছাড়িয়েছে।