আবার সামরিক সরকার। এবার ক্ষমতা দখল করলেন জেনারেল এরশাদ। শুরুতে দুর্নীতি ও অবস্থাপনার বিরুদ্ধে অনেক প্রতিশ্রুতি ছিল। পরে সেই দুর্নীতি আর অবস্থাপনাই আরও প্রকট হয়। দুজন অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। একজনকে অপসারণ করা হয়। আবার অনেকে বলেন নিজ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। শুরুতে অর্থাৎ ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে উন্নয়ন ব্যয়ের ৩৫ শতাংশ আসত অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। আর পড়ুন১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটের ৯৯ শতাংশই ছিল বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর।
আবার সামরিক শাসন, আবারও জাতীয় সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন। ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা, ব্যয় ২ হাজার ৩৮ কোটি টাকা এবং এডিপি ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার।
বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়। সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা দেওয়া হয়। যাঁদের বেতন এক হাজার টাকার কম, তাঁদের জন্য মহার্ঘ ভাতা ছিল ৩০ শতাংশ, আর এক হাজার টাকার বেশি হলে ২০ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী ব্যক্তিমালিকানায় বিনিয়োগকে উৎসাহ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, সরকারের ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা যেখানে সীমিত, সেখানে ব্যক্তিমালিকানার উদ্যোগ ও স্বাধীনচেতা প্রচেষ্টার বিকাশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাজেটে কালোটাকা সাদা করার কথাও উল্লেখ ছিল। এ নিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ব্যক্তিমালিকানায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা সম্বন্ধে আমার বিশেষ কিছু বলার নেই। কিছুদিন আগে সরকার এ ব্যাপারে মৌলিক নীতি ঘোষণা করেছে। আমরা আশা করছি যে অঘোষিত আয় ঘোষণার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা থেকে প্রচুর বিনিয়োগ আসবে।’
অর্থমন্ত্রী বাজেটে অর্থনৈতিক অবস্থার এক করুণ চিত্রও তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, ‘প্রবৃদ্ধির হার যখন শূন্যের কোঠায়, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যখন মন্দা, কর্মসংস্থান যখন সীমিত, বিনিয়োগের হার যখন নিম্নগামী, আমদানি-রপ্তানি যখন বিঘ্নিত, বৈদেশিক সাহায্য যখন সংকুচিত—তখন এই মন্দা অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রয়াস হওয়া উচিত অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও দৃঢ়চিত্ত। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিবেশে শিগগিরই কোনো নাটকীয় পরিবর্তন আসবে না। মূল্যস্ফীতি প্রশমনের প্রবণতা দেখা দিলেও অর্থনৈতিক মন্দা নিরসনের আশু সম্ভাবনা নেই।’
বাজেট দেওয়া হয়েছিল পুরোনো সংসদ ভবনে, এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, রাজস্ব ব্যয় ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা এবং এডিপির আকার ছিল ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকার।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাজেটে অর্থমন্ত্রী জোর দিয়েছিলেন সাশ্রয়ের ওপর। এ জন্য নতুন অর্থবছরকে তিনি সাশ্রয়ের বছর বলে উল্লেখ করেছিলেন। আয়ের দিক থেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল আমদানি শুল্ককে। এরপরেই ছিল বিক্রয় কর ও আবগারি শুল্ক। তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন, মোট জাতীয় বিনিয়োগের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ দেড় হাজার কোটি টাকা আসবে বেসরকারি খাত থেকে। এ ছাড়া প্রথমবারের শুল্কায়নের জন্য আমদানি পণ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। যেমন কাঁচামাল, শিল্পের রসদ হিসেবে ব্যবহৃত প্রক্রিয়াজাত সামগ্রী ও প্রস্তুত পণ্য। আর আমদানি পণ্যকে ভাগ করে ৭টি শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে কাঁচামালের শুল্কহার ২০ শতাংশ, শিল্পে ব্যবহার্য প্রক্রিয়াজাত সামগ্রীর শুল্কহার ৫০ শতাংশ এবং প্রস্তুত পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্কহার নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী বাজেটে নতুন একটি কর চালু করেছিলেন। এর নাম ছিল সেচকর। এ আইন অনুযায়ী সেচ ব্যবহার করলে কৃষককে কর দিতে হবে।
আবারও সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন। এম সাইদুজ্জামান তখন অর্থ উপদেষ্টা। ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয় ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা, ব্যয় ২ হাজার ৮০২ কোটি টাকা এবং এডিপির আকার ছিল ৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকার।
বাজেটে আয় বাড়াতে রেলভাড়া শ্রেণি অনুযায়ী ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তখন রেশনব্যবস্থা চালু ছিল। রেশনে খাদ্যশস্যের ওপর ভর্তুকি ৫১ কোটি টাকা কমানো হয়, পোস্ট কার্ড ও খামের মাশুল দ্বিগুণ করা হয়, কোনো অনুষ্ঠানে এক শর বেশি অতিথি আপ্যায়ন করলে অতিথি প্রতি ১০ চাকা হারে জরিমানা আরোপ করা হয়।
১৯৮৪ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন আয়কর আইন চালুর ঘোষণাও দেন অর্থমন্ত্রী। এই নতুন আইনে স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে আয়করে সীমা ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হয়।
১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা ছিল ৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা, ব্যয় ৩ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা এবং এডিপির আকার ছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। বাজেটে নতুন করা আরোপ করা হয় ১৯৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। এটি ছিল তৃতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রথম বছর।
বাজেটে বেসরকারি খাতের বৃহত্তর ভূমিকা ও সরকারি খাতের দক্ষ ব্যবস্থাপনার ওপরই বেশি জোর দিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা এম সাইদুজ্জামান। এ ছড়া তিনি রাজস্ব আয়ে প্রত্যক্ষ করের ওপরও গুরুত্ব বাড়ানোর কথা বলেছিলেন। নতুন বেতন স্কেল কার্যকর করতে ৩৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয় এবং ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৮০ হাজার টাকা আয় হলেই সম্পদ ও ব্যয়ের বিবরণী প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়। স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে আয়কর বিবরণী দেওয়ার সীমা এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সোয়া লাখ টাকা করা হয়। আর নতুন আয়করদাতাদের ক্ষেত্রে এক লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধন বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়ার কথাও আয়কর আইনে বলা হয়। আবার নতুন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে কর অবকাশ সুবিধা আরও পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়।
অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংকঋণের হার ২৩ শতাংশ বাড়ালেও ঋণ পরিশোধ না করার প্রবণতা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে মুদ্রা সরবরাহ ২৮ ও ৪১ ভাগ হারে বেড়ে যাওয়ায় ১৯৮৪ সালে অবস্থা নাজুক হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে তিনি বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘এ বছর অর্থনীতিকে অন্য যে একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তা হলো অত্যধিক পরিমাণে ব্যাংকঋণ সম্প্রসারণ ও মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি। বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণ প্রসার, বিশেষ করে কৃষিঋণ প্রসার যে পরিমাণে হয়েছে, সে অনুপাতে ঋণ পরিশোধ হয়নি। ফলে মুদ্রা সরবরাহ অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। পর পর কয়েক বছর এই অত্যধিক পরিমাণ মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেই মঙ্গলজনক নয় বরং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়।’
১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা ও ব্যয় ৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এডিপির আকার ঠিক করা হয়েছিল ৪ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় সম্পদের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৫০ কোটি। বাকি ৩ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকার এডিপি ছিল বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি শিল্পঋণের সুদ হার কমানো হয়। যেমন শিল্পে বিনিয়োগকৃত ৪০ ভাগ ইকুইটির জন্য সুদহার ঠিক করা হয় ১২ শতাংশ, ৩০ ভাগ ইকুইটির জন্য ১৩ শতাংশ এবং ২০ ভাগ ইকুইটির জন্য সুদহার ঠিক করা হয় সাড়ে ১৩ ভাগ। বাজেটে গ্যাস ও টেলিফোন চার্জ বাড়ানো হয়, তবে কেরোসিন, ডিজেল ও পেট্রলের দাম কমানো হয়।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন এম সাইদুজ্জামান। তবে বাজেট বক্তৃতা শুরুর আগেই ওয়াক আউট করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল। ১৮৮৭-৮৮ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয় ৪ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা, ব্যয় ৪ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা এবং এডিপি ছিল ৫ হাজার ৮৪ কোটি টাকার।
বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩৬ হাজার টাকা করা হয়, আর করপোরেট কর ৫ শতাংশ কমানো হয়। এই বাজেটেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়। যেকোনো আয়কে অন্যান্য সূত্র হিসেবে দেখিয়ে ২০ শতাংশ কর দিলেই বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্রত্যাশিত ৫১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের মধ্যে বেসরকারি খাতে গত তিন বছরে মাত্র ৩০৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ হওয়ায় আয়করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’
ব্যাংকিং কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘দেশে ঋণ ও অর্থ সরবরাহের মধ্যে সাবলীল নিয়ন্ত্রণ নেই, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্জ অবাঞ্ছনীয় হারে বেড়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাসহ বেসরকারি খাতে বিপুল অনাদায়ি ঋণ জমছে, পরিচালন ও অর্থ সংস্থানে ব্যাংকগুলো নিজ মেরুদণ্ডের ওপর স্থিত হতে পারছে না।’
১৯৮৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর এম সাইদুজ্জামান পদত্যাগ করেন। নতুন অর্থমন্ত্রী হন মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মুনএম। ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরের বাজেট দেওয়া হয়েছিল জাতীয় সংসদেই। বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা এবং ব্যয় ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। আর এডিপির আকার ছিল ৫ হাজার ৩১৫ টাকা। এই বাজেটেও ২০ শতাংশ হারে আয়কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়।
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদুল হক একটি বাজেটই দিয়েছিলেন। ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা ছিল ৭ হাজার ১৮০ কোটি এবং ব্যয় ৬ হাজার ৯০০ কোটি। আর এডিপির আকার ছিল ৫ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। তবে এই বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল এডিপির ৫ হাজার ৫০ কোটি টাকাই ছিল বৈদেশিক সাহায্যের ওপরে নির্ভরশীল।
বাজেট দিতে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হয়েছিল অর্থমন্ত্রীকে। সব খাত নিয়েই তিনি বিপাকে ছিলেন। ব্যাংক ও খেলাপি ঋণ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা হতে দেখা যায় যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে, আদায়যোগ্য ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং খেলাপি ঋণের অঙ্ক অসহনীয় পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এই পরিস্থিতি শিল্প ও কৃষি খাতে ঋণের ক্ষেত্রে বিরাজমান। ঋণ আদায়ের পরিমাণ পর্যাপ্ত না হলে, অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিজস্ব সম্পদ থেকে পুনরায় ঋণ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। অপর দিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অর্থনীতির বিকাশের ফলে ঋণের প্রয়োজন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। ঋণ বিতরণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার অবনতি একটি দুঃসহ অবস্থা সৃষ্টি করে। আপাতদৃষ্টিতে এ অবস্থার একটি সহজ পরিত্রাণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের পুনঃ অর্থায়ন বৃদ্ধি। কিন্তু এর পরিণাম মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতি, যার ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিকাশের গতিধারা বিপর্যস্ত এবং বাধাগ্রস্ত হয়। শিল্পঋণের ক্ষেত্রে ঋণ আদায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। শিল্পক্ষেত্রে মেয়াদি বড় ও মাঝারি ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ৩০ জুন, ১৯৮৮ তারিখে শতকরা ৫২ ভাগে দাঁড়িয়েছে। ক্ষুদ্রশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ আদায় পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। কৃষিঋণ আদায়ের ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলোর অভিজ্ঞতা সন্তোষজনক নয়।’
বাজেট পেশের আগের মাসে ওয়াহিদুল হক পদত্যাগ করলে আবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মুনএম। ১৯৯০-৯১ অর্থবছরের বাজেট ছিল এরশাদ আমলের শেষ বাজেট। ১৯৯০-৯১ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয় ৮ হাজার ১৫৮ কোটি এবং রাজস্ব ব্যয় ধরা হয় ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এডিপির আকার ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা ধরা হলেও এর প্রায় পুরোটাই ছিল বিদেশি সাহায্যনির্ভর। এই এডিপিতে সাহায্য ধরা ছিল ৫ হাজার ১২০ কোটি টাকা।
বাজেটে কর–ব্যবস্থায় বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। যেমন একটি জাতীয়ভিত্তিক ন্যাশনাল ট্যাক্স পেয়ারস নম্বর বণ্টন। বিলাসবহুল হোটেলে ২০ হাজার টাকার বেশি বিল পরিশোধ করলে কিংবা মোটর যান অথবা শহরের জমি কেনার সময় এই নম্বর দেখাতে হবে এবং অগ্রিম কর প্রদানও করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদেরও প্রথমবারের মতো আয়করের আওতায় আনা হয়। আবার ব্যাংকের সঞ্চয়ী ও মেয়াদি আমানতের ওপরও ১০ শতাংশ হারে উৎসে অগ্রিম কর কাটার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া করমুক্ত আয়ের সীমা ৩৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪০ হাজার টাকা করা হয়।