Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রমোদতরিতে করে রাতে যাবেন, দিনে ফিরবেন

চট্টগ্রাম থেকে রাতে সাত ঘণ্টায় সেন্ট মার্টিন গিয়ে সেখানে পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান, ঘোরাঘুরি। এরপর আট ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ফেরা।

দেশের প্রথম বিলাসবহুল প্রমোদতরি বে ওয়ান ক্রুজ। চট্টগ্রামে ওয়াটার বাস টার্মিনালে

জাহাজের কেবিন ও আসনে ৫১১ জন পর্যটক। প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে সাগরপথে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন তাঁরা। গত বৃহস্পতিবার রাত ঠিক পৌনে ১২টায় পতেঙ্গার ওয়াটার বাস টার্মিনাল থেকে তাঁদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘এমভি বে ওয়ান’।
চট্টগ্রাম–সেন্ট মার্টিন সাগরপথে এমভি বে ওয়ানের প্রথম যাত্রায় যাত্রী হতে বাস, ট্রেন ও উড়োজাহাজে চেপে ঢাকা থেকেও অনেক পর্যটক এসেছেন। জাপানের টোকাই কিসেন কোম্পানির কাছ থেকে জাহাজটি কিনে এনেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড। জাপানে জাহাজটির নাম ছিল ‘সিলভিয়া মারু’, যা টোকিওর পাঁচটি দ্বীপে পর্যটক আনা–নেওয়া করত।

জাহাজটি যখন কর্ণফুলী নদীর মোহনা পার হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে, তখন পর্যটকদের আনন্দ যেন সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাঁরা ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা বড় জাহাজগুলো দেখতে থাকেন। মধ্যরাতে সাত–আটতলা উঁচু বড় বড় জাহাজকে দূর থেকে উঁচু ভবনের মতোই মনে হচ্ছিল। বড় বড় জাহাজের দৃশ্য দেখা শেষ না হতেই ওপরের ডেকে শুরু হয়ে যায় গানবাজনা। কেবিন ছেড়ে অনেকেই জাহাজের ডেকে এসে গান উপভোগ করেন।

শীত মৌসুম হওয়ায় এখন সাগরে ঢেউ নেই। ভারসাম্য থাকায় শিশু, নারী, কিশোর, বৃদ্ধনির্বিশেষে যাত্রীদের কারও জাহাজে ঘুরতে সমস্যা হচ্ছিল না। তবে নাবিকেরা জানালেন, ঢেউ থাকলেও জাহাজে ভারসাম্য রাখার ডানা আছে। তাই এটি হেলেদুলে চলে না। বাণিজ্যিক জাহাজের মতো ইঞ্জিনের শব্দও কানে বাজে না।

মধ্যরাতে ডেকের সোফায় বসে প্রথম যাত্রা উপভোগ করছিলেন সৈয়দ আকতার নামের এক পর্যটক। বললেন, ‘জীবনে ৪১টি দেশ ভ্রমণ করলেও আগে কখনো পর্যটকবাহী জাহাজে চড়া হয়নি। এবার সে সাধ মিটল। খুবই ভালো লাগছে।’
গান শোনা, আড্ডা আর ঘণ্টা তিনেকের এক ঘুমে কেটে গেল রাত। সকাল পৌনে সাতটার দিকে সাউন্ড সিস্টেমে প্রথম যাত্রা শেষ হওয়ার খবর শোনা গেল। প্রথম যাত্রায় লেগেছে সাত ঘণ্টা। সেন্ট মার্টিন জেটির এক কিলোমিটার দূরে নোঙর করল জাহাজটি। নাবিকেরা জানান, সেন্ট মার্টিন জেটিতে গভীরতা কম থাকায় এক কিলোমিটার দূরেই নোঙর করতে হয়েছে। সেখান থেকে আরেকটি ছোট জাহাজ ১০ মিনিটে যাত্রীদের জেটিতে নিয়ে নামাল।

এরপর ঘণ্টা পাঁচেক দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ঘুরে দুপুর সোয়া ১২টায় যাত্রীরা আবার জাহাজে উঠলেন। এবার দিনের বেলায় সাগরে ভ্রমণ। দিগন্তবিস্তৃত নীল আকাশ দূরে সমুদ্রের নীল জলরাশিতে যেন মিশে গেছে। শান্ত সাগরের বুক চিরে জাহাজটি চট্টগ্রামের দিকে ছুটছে, আর পর্যটকেরা নীল জলরাশি, মাছ ধরার ট্রলার থেকে জাল ফেলার দৃশ্য দেখছেন।

কে চালাচ্ছেন এই জাহাজ, তা জানার জন্য যেতে হলো ব্রিজে। সেখানেই কথা হয় জাহাজটির মাস্টার ক্যাপ্টেন আলমগীর কবিরের সঙ্গে। ওখান থেকেই জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। কত গতিতে চলছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পর্দার দিকে ইঙ্গিত করলেন। দেখা গেল, ১৮ দশমিক ৭ নটিক্যাল মাইল বা প্রায় ৩৫ কিলোমিটার গতিতে চলছে। তবে সর্বোচ্চ গতি পাওয়া গেছে ২২ নটিক্যাল মাইল।

ফিরতি পথে স্রোতের প্রতিকূলে জাহাজের গতি ধরে রাখা যায়নি। তাই সেন্ট মার্টিন থেকে চট্টগ্রাম ফিরতে সাড়ে আট ঘণ্টা লেগে গেল। সাগরে জট না থাকলেও স্রোতের প্রতিকূলতা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানো কঠিন করে দেয়।

জাহাজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাশুক হাসান আহমেদ প্রথম আলোকে বললেন, দেশের পর্যটকেরা এই প্রথম ক্রুজে পর্যটনের স্বাদ উপভোগ করলেন। ব্লু ইকোনমি বা নীল অর্থনীতিতে এই পর্যটন বড় অবদান রাখবে।

প্রমোদতরি থেকে দেখা সুর্যাস্তও

ভাড়া ও সুযোগ–সুবিধা

এই জাহাজে সাশ্রয়ী প্যাকেজ হলো সর্বনিম্ন জনপ্রতি তিন হাজার ও চার হাজার টাকা। চেয়ারে বসে যাওয়া এবং আসার ভাড়া এটি। সবচেয়ে দামি প্যাকেজ হলো দুজনের শয্যার ভিভিআইপি কেবিন। ফিরতি টিকিটসহ সেটির ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। এরপরে রয়্যাল প্যাকেজ ৪৫ হাজার এবং প্রেসিডেনশিয়াল প্যাকেজ ৩০ হাজার টাকা। চার শয্যার ফ্যামিলি কেবিনের ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। এর বাইরে ফিরতি টিকিটসহ একজনের শয্যার ভাড়া ১০ হাজার টাকা। যাওয়া–আসা ছাড়াও একপথের টিকিট আছে। সে ক্ষেত্রে ভাড়ার হার ফিরতি টিকিটের অর্ধেকের কাছাকাছি।

সাইফুল ইসলাম নামে জাহাজের এক যাত্রী জানালেন, সড়কপথের তুলনা করলে এই জাহাজ তিন থেকে চার হাজার টাকা ভাড়া সাশ্রয়ী। তবে কেবিনের সুবিধা থাকলেও ভাড়া বেশি। তবে জাহাজটিতে খাবারেরও বৈচিত্র্য আনতে হবে।

চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি এত দিন সেন্ট মার্টিন যাওয়ার সুযোগ ছিল না। সড়কপথে প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ এবং সেখান থেকে নৌপথে সেন্ট মার্টিন যেতে হতো। সব মিলিয়ে ২৮২ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে সময় লাগে কম–বেশি আট ঘণ্টা। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস ও নৌযান মিলে ভাড়া গুনতে হয় আসা–যাওয়াসহ জনপ্রতি ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। আর সাগরপথে চট্টগ্রাম থেকে ২৩৬ কিলোমিটার দূরে সেন্ট মার্টিন যেতে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হবে না বলে জানালেন এমভি বে ওয়ান জাহাজের কর্মকর্তারা। চাইলে আপনারাও একবার ঘুরে আসতে পারেন।