মাতারবাড়ী নৌপথ

বন্দর সুবিধায় নতুন মাইলফলক

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে সর্বোচ্চ ১০ মিটার ড্রাফট বা গভীরতার জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধা চালু হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর
 ফাইল ছবি

বাংলাদেশে এত দিন জোয়ারের সময় সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ সরাসরি বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর সুবিধা ছিল। সেই সুবিধা এখন ১০ মিটারে উন্নীত হয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে এখন যেকোনো সময় ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ মাসে এই সুবিধার কথা ঘোষণা করেছে।

জেটিতে যত বেশি গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যায়, তত বেশি পণ্য পরিবহন করা যায়। তাতে যেমন পণ্য পরিবহনের খরচ কমে, তেমনি বন্দরের সক্ষমতাও বাড়ে। বন্দর সুবিধার বড় উপাদান এটি।

চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে এখন সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশ) বা গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যায়। মোংলা বন্দরে তা সাত থেকে সাড়ে সাত মিটার। আর চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন প্রকল্প মাতারবাড়ীতে তা ১০ মিটার, যেটি ধাপে ধাপে ১৪ মিটারে উন্নীত হবে।

চলতি বছর ডিসেম্বরে মাতারবাড়ীতে কয়লা খালাসের ৩০০ মিটার জেটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তাতে আগামী বছর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে কয়লাবাহী বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন টার্মিনাল চালুর আগেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বন্দর সুবিধায় নাম উঠবে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটির।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজের ড্রাফট বা গভীরতা বিবেচনা করলে এখনই সবচেয়ে বেশি সুবিধা মাতারবাড়ীতে। জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বন্দর সেখানে সব আনুষঙ্গিক সুযোগ–সুবিধা দিচ্ছে।

মাতারবাড়ীতে বন্দর সুবিধা বাড়লেও এখনই তার সুফল পাবে না দেশের আমদানি–রপ্তানিকারকেরা। কারণ, মাতারবাড়ীতে কয়লা ও তেল খালাসের দুটি জেটিতে এখন শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সরঞ্জাম আনা হচ্ছে। সামনে বড় জাহাজে কয়লা আমদানি হবে।

জাহাজের ড্রাফট বা গভীরতা বিবেচনা করলে এখনই সবচেয়ে বেশি সুবিধা মাতারবাড়ীতে। জাহাজ ভেড়ানোর জন্য বন্দর সেখানে সব আনুষঙ্গিক সুযোগ–সুবিধা দিচ্ছে।
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালে। তখন সুবিধা পাবে আমদানি–রপ্তানিবাণিজ্য। আর সড়ক সংযোগ চালু হলে ২০২৬ সাল থেকে পুরোদমে সুফল মিলবে এই টার্মিনালের।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এখনই সুবিধা না পেলেও এটা নিঃসন্দেহে বড় সুখবর। ভবিষ্যতে এই টার্মিনালই যে আমদানি–রপ্তানিবাণিজ্যের আঞ্চলিক কেন্দ্রবিন্দু হবে, তাতে সন্দেহ নেই। তবে এটাও ঠিক, বে টার্মিনাল প্রকল্পও এখন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে বন্দর সুবিধা নিয়ে আগামী ৫০ বছর আর ভাবতে হবে না।

মাতারবাড়ী জেটিতে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য ১৪ কিলোমিটার লম্বা নৌপথে সাড়ে ১৮ মিটার গড় গভীরতা (মিন সি লেবেল) তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এই গড় গভীরতার অর্থ হলো নৌপথে ভাটার সময়ও প্রায় ১৬ মিটার পানি থাকবে। তাতে এই নৌপথ ব্যবহার করে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যাবে।

এখনই সুবিধা না পেলেও এটা নিঃসন্দেহে বড় সুখবর। ভবিষ্যতে এই টার্মিনালই যে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের আঞ্চলিক কেন্দ্রবিন্দু হবে, তাতে সন্দেহ নেই।
মাহবুবুল আলম, সভাপতি, চট্টগ্রাম চেম্বার

মাতারবাড়ী নৌপথে এত দিন বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশনের ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’ প্রকল্পের জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছিল। সে জন্য সাময়িক সময়ের জন্য নৌপথের একাংশ ঘুরিয়ে নেওয়া হয়। তাতে ৯ মিটার গভীরতার বেশি জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ ছিল না জেটিতে। এখন ওই অংশে পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ফলে নৌপথটিতে এখন ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ আনা–নেওয়ায় আর বাধা নেই।

তবে লম্বায় খুব বেশি বড় জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ রাখা হয়নি। মাত্র ১৫০ মিটার লম্বা জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এর কারণ হিসেবে বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাতারবাড়ী নৌপথের এলাকাজুড়ে এখন বার্জ, ছোট জাহাজসহ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজের নানা জলযান রাখা হচ্ছে। এ মুহূর্তে দরকার না থাকায়ও লম্বা জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তেল খালাসের ১৮০ মিটার লম্বা জেটিটি নির্মাণ করা হয়েছিল গত বছর। এখন কয়লা খালাসের জন্য ৩০০ মিটার লম্বা জেটির ১৭৫ মিটারের কাজ শেষ হয়েছে। এটির নির্মাণকাজ এ বছর শেষ হবে। আর কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের ৫৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু হবে।

বন্দর জানায়, গত সাত মাসে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জামবাহী ১৯টি জাহাজ ভেড়ানো হয়েছে, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো হয়।