রাজধানীর উত্তরাজুড়ে বিস্তৃত আবাসিক এলাকা। সম্প্রতি পাখির চোখে তোলা আবাসিক ভবনগুলোর দৃশ্য
রাজধানীর উত্তরাজুড়ে বিস্তৃত আবাসিক এলাকা। সম্প্রতি পাখির চোখে তোলা আবাসিক ভবনগুলোর দৃশ্য

আবাসন  মেলা

মাঝারি ফ্ল্যাট সচল রাখছে আবাসন খাত

উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ঋণের সুদের হারের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে পড়েও আবাসন খাতের বাজার সম্পূর্ণ স্থবির নয়। যদিও ক্রেতাদের ওপর চাপে ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন অনেকটা দমে গেছে, তবু মাঝারি মূল্যের ফ্ল্যাটের এখনো কিছুটা চাহিদা ধরে রাখতে সক্ষম; যা আবাসন খাত সচল রাখছে বলে মনে করেছেন উদ্যোক্তারা।

আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি একধরনের ‘সর্বোচ্চ চাপ’–এর খাতে প্রতিফলিত হচ্ছে। ডলারের বিনিময় হারের ওঠানামা, উচ্চ সুদের হার এবং ড্যাপ সংশোধনী বিলম্বের মতো কারণে ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এ সময়ে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ক্রেতা হারিয়েছে বাজার।

কনকর্ড গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা অনুপ কুমার সরকার জানিয়েছেন, উচ্চ সুদ ও মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের ক্রেতারা ঋণনির্ভর ফ্ল্যাট কেনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তবে ১ থেকে ২ কোটি টাকার মাঝারি ফ্ল্যাটের চাহিদা সীমিত পরিসরে টিকে আছে, যা বাজারকে সচল রাখছে।

অনুপ কুমার সরকার আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে ফ্ল্যাটের চাহিদা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমেছে। প্রিমিয়াম ফ্ল্যাটের বিক্রি ৬০ শতাংশ বা তারও বেশি হ্রাস পেয়েছে। তবে মাঝারি মূল্যের ফ্ল্যাটই এখন বাজারের প্রধান ভরসা। 

সত্তরের দশকের শেষের দিকে দেশে আনুষ্ঠানিক আবাসন খাত তৈরি হয়েছে। গত চার দশকে নানামুখী বাস্তবতা ও ঝুঁকিতেও পড়েছে এ খাত। তবে তা সামলেছেন বেশ ভালোভাবেই—এমন মন্তব্য করেন ট্রপিক্যাল হোমসের মার্কেটিং, সেলস, ল্যান্ড, কাস্টমার সার্ভিসের পরিচালক এম হক ফয়সাল। 

এখনকার সংকটের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে এম হক ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ড্যাপ নিয়ে সরকারের সংশোধনীগুলো বারবার প্রলম্বিত হচ্ছে, সেটা একটা বিষয় আর বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। তৃতীয় হচ্ছে উচ্চ সুদের হার—এই তিনটিই বাজারকে প্রভাবিত করছে। ‘আগে আমরা একটা পাঁচ কাঠায় যতটুকু বিক্রয়যোগ্য জায়গা পেতাম, এখন তার চেয়ে অনেক কম পাই নতুন নিয়মের কারণে। এ ছাড়া গত দুই বছরে নির্মাণের প্রধানতম উপকরণ রড, এমএস রড এবং সিমেন্টের মূল্য বেড়েছে।’

এম হক ফসালের মতে, এসব কারণে এ খাতের বাজার সংকুচিত হতে হতে গত পাঁচ বছরে অন্তত ৩০ শতাংশ ক্রেতার সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে ফ্ল্যাটের মূল্য।

‘শুধু উচ্চমধ্যবিত্তের মানুষ কষ্ট করে, ঋণ করে, ধার করে ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন। তবে এভাবে চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছর তাঁদেরও আমরা হারাব। তখন এই ব্যবসাটাকে টিকিয়ে রাখা খুব দুঃসাধ্য হবে।’ বলেন তিনি।

রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া মনে করেন, সংকটের সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, ঢাকার ওপর চাপ কমাতে স্যাটেলাইট সিটি করা যেতে পারে। গাজীপুর বা কেরানীগঞ্জের মতো এলাকায় নাগরিক সুবিধা—গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও স্কুল নিশ্চিত করলে ভিড় কমবে। এ ছাড়া সুদের হার কমিয়ে একক সংখ্যায় নামানো এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো গেলে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ফলে উচ্চ সুদ ও মূল্যস্ফীতির চাপ থাকা সত্ত্বেও মাঝারি মানের ফ্ল্যাট এখনো বাজারকে কিছুটা সচল রাখছে। বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী, সঠিক নীতি ও সুবিধার মাধ্যমে আবাসন খাত ক্রেতার জন্য আবারও সহজলভ্য ও টেকসই হতে পারে।