কুমিল্লা ইপিজেড
কুমিল্লা ইপিজেড

রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেশি কুমিল্লায়, কম ঢাকায়

দেশে বর্তমানে মোট ৯টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) উৎপাদনে রয়েছে। এর মধ্যে গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কুমিল্লা ইপিজেড থেকে। আর সবচেয়ে কম রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঢাকা ইপিজেডের কারখানাগুলো থেকে। সার্বিকভাবে গত এক অর্থবছরে ইপিজেডগুলো থেকে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, প্রবৃদ্ধিতে কুমিল্লা এগিয়ে থাকলেও রপ্তানি আয়ের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম। সর্বশেষ গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ২৩৭ কোটি ৫৭ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে দেশের ইপিজেডগুলো থেকে ১২০টি দেশে পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটি ওই অর্থবছরের জাতীয় রপ্তানির প্রায় ১৭ শতাংশ।

দেশের ইপিজেডগুলো তত্ত্বাবধান করে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। বেপজার অধীন বর্তমানে চট্টগ্রাম, ঢাকা, মোংলা, কুমিল্লা, পাবনার ঈশ্বরদী, নীলফামারীর উত্তরা, নারায়ণগঞ্জের আদমজী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী—আটটি ইপিজেড রয়েছে। চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলেও (ইজেড) স্বল্প পরিসরে উৎপাদন কাজ শুরু হয়েছে।

* ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯ ইপিজেড থেকে মোট রপ্তানি ৮২২ কোটি ৩২ লাখ ডলারের। * ইপিজেডগুলো থেকে ১২০টি দেশে পণ্য রপ্তানি হয়েছে। * সবচেয়ে বেশি ২৬.৬৯% রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কুমিল্লা ইপিজেড থেকে। * রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে কম ঢাকা ইপিজেডে, ৫.৫%।

অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এসব ইপিজেড ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪৫০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ পর্যন্ত তাদের মোট বিনিয়োগ ৭০৮ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। কোম্পানিগুলোর ক্রম পুঞ্জিত রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯০০ কোটি বা ১১৯ বিলিয়ন ডলার। এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মানুষের, যার ৬৬ শতাংশ নারী।

কুমিল্লায় প্রবৃদ্ধি বেশি কেন

গত অর্থবছরে কুমিল্লা, আদমজী, কর্ণফুলী, মোংলা—এই চার ইপিজেড থেকে বেশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। অন্যদিকে ঢাকা ইপিজেডসহ কয়েকটি পুরোনো ইপিজেডে এ সময়ে রপ্তানি আয় তুলনামূলক কম বেড়েছে।

রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৯টি ইপিজেড ও ইজেডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২৭ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কুমিল্লা ইপিজেড থেকে। এই ইপিজেডে ৪৮টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা থেকে গত অর্থবছরে ৯০ কোটি ১২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭১ কোটি ১৩ লাখ ডলারের।

বেপজার কর্মকর্তারা জানান, গত বছর কুমিল্লায় ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ডিক্স ক্যাজুয়াল ওয়্যার (বাংলাদেশ), সুর্তি টেক্সটাইল (বিডি), কাদেনা স্পোর্টসওয়্যার, ইস্টপোর্টসহ কয়েকটি কারখানা অনেক বেশি ক্রয়াদেশ পেয়েছিল, যার প্রভাব পড়েছে কুমিল্লা ইপিজেডের সার্বিক রপ্তানিতে।

অন্যদিকে গত অর্থবছরে সবচেয়ে কম রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঢাকা ইপিজেড থেকে, মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঢাকা ইপিজেড থেকে মোট ১৭৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১৬৯ কোটি ১২ লাখ ডলারের পণ্য। আর ২০২১-২২ বছরে ঢাকা ইপিজেড থেকে রপ্তানি হয়েছিল ২১২ কোটি ২৮ লাখ ডলারের পণ্য।

বেপজার কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা ইপিজেডে বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা ইপিজেডে মোট ৮৩টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বড় রপ্তানিকারক সাউথ চায়না গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো হচ্ছে সাউথ চায়না ব্লিচিং অ্যান্ড ডাইং ফ্যাক্টরি, গোল্ডটেক্স লিমিটেড, গোল্ডটেক্স গার্মেন্টস ও অ্যাক্টর স্পোর্টিং। এ ছাড়া লেনি অ্যাপারেলস ও লেনি ফ্যাশনসের কারখানা বন্ধ। আর একসময়কার বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রিংসাইন টেক্সটাইলের উৎপাদন চলছে এখন ধুঁকে ধুঁকে। এসব কারণে ঢাকা ইপিজেড থেকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বিনিয়োগ বাড়ছে বেপজা ইজেডে

বেপজা কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে এবং ভালো অবকাঠামো–সুবিধা থাকায় সেখানে বিনিয়োগও বাড়ছে। ইতিমধ্যে সেখানে ছয়টির বেশি কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। কারখানা স্থাপনে চুক্তি করেছে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান। আবার মোংলা বন্দরকে ঘিরে মোংলা ইপিজেডেও বিনিয়োগ বাড়ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। এ ছাড়া যশোর ও পটুয়াখালীতে দুটি ইপিজেডের নির্মাণকাজ চলছে। আগামী বছর ইপিজেড দুটিতে জমি বরাদ্দ দেওয়া শুরু হতে পারে।

সার্বিক রপ্তানি বেড়েছে

অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইপিজেডগুলো থেকে ৮২২ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭০৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।

অবশ্য গত ৯ বছরের মধ্যে ইপিজেড থেকে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে। ওই বছর ৮৬৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। এরপর দুই বছর ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি কমার পরে গত অর্থবছরে আবার তা বেড়েছে।

এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। ওই সময় দেশের তৈরি পোশাক, ওষুধসহ বেশ কিছু কারখানায় অস্থিরতা দেখা যায়। তবে এসবের প্রভাব ইপিজেডভুক্ত কারখানার ওপরে পড়েনি বলে জানিয়েছেন বেপজা কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) আনোয়ার পারভেজ বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ক্রেতারা ইপিজেডভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপদ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করেন। এ কারণে ক্রেতারা ইপিজেডভুক্ত কারখানাগুলোতে ক্রয়াদেশ কমাননি, বরং ক্ষেত্রবিশেষে বেশি ক্রয়াদেশ দিয়েছেন। ফলে গত বছরের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতেও এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।