Thank you for trying Sticky AMP!!

গত ১৩ বছরে রাজধানীর অন্য যে কোনো এলাকার চেয়ে সবচেয়ে বেশি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে গুলশানে। এসব অ্যাপার্টমেন্টের অধিকাংশ বিলাসবহুল

গুলশানে এত বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন কারা

ঢাকায় অভিজাত এলাকার তালিকা করলে শীর্ষস্থানে থাকবে গুলশান। যেখানে বসবাস করেন সমাজের বিত্তবানদের একাংশ। সেই সংখ্যাটি বছর বছর বাড়ছে। তার কারণ, প্রতিবছরই গুলশানে অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে দামও।

২০১০ সাল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ১৩ বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭ শতাংশ বা ২২ হাজার ৮৭৬টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে গুলশানে।

তারপরের অবস্থানে রয়েছে ধানমন্ডি, সেখানে তৈরি হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৪টি অ্যাপার্টমেন্ট। এরপর যথাক্রমে মোহাম্মদপুরে ১৪ হাজার ৮০২ টি, মিরপুরে ১২ হাজার ১১১টি, বনানীতে ৮ হাজার ৭৪টি এবং উত্তরায় ৬ হাজার ৭২৮টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে।

আগামী বছর পর্যন্ত আরও ১৩ হাজার ৭০০ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণাধীন রয়েছে। তার মধ্যে গুলশানেই নির্মাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৮৯টি অ্যাপার্টমেন্ট। এর বাইরে ধানমন্ডিতে ১ হাজার ৮৮০টি, মিরপুরে ১ হাজার ২০৯টি, রমনায় ১ হাজার ৭৫টি, উত্তর বাড্ডায় ৯৪০টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণাধীন রয়েছে।

Also Read: সংকট তৈরি হবে ফ্ল্যাটের, বাড়বে দাম ও বাসাভাড়া

গত ১৩ বছরে ঢাকার কোন এলাকায় কত অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে

বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এমন তথ্যই জানিয়েছে বাংলাদেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০টি ফ্ল্যাট সরবরাহ করে বাংলাদেশের আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। তার মধ্যে উচ্চ ও মাঝারি অভিজাত ফ্ল্যাটের সংখ্যা ছিল ৭৪ হাজার ৪২৯টি। এসব উচ্চ ও মাঝারি অভিজাত ফ্ল্যাটের দাম ১ কোটি টাকার ওপরে।  

গত বছর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গফুটের গড় দাম ছিল ১৪৩ মার্কিন ডলার। তবে গুলশানে এ গড় দাম ১৬৬ ডলার। তার মানে দেশীয় মুদ্রায় প্রতি বর্গফুটের গড় দাম ১৭ হাজার ৪৩০ টাকা। এই দাম অনুযায়ী, গুলশানে ২ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের দাম দাঁড়ায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি।

Also Read: ২১ বছরে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে গড়ে ৫৩৯% 

গুলশানের পর অ্যাপার্টমেন্টের দাম সবচেয়ে বেশি বারিধারায়। এখানে গত বছর প্রতি বর্গফুটের গড় দাম ছিল ১৬০ ডলার ৭৪ সেন্ট। দেশীয় মুদ্রায় এ দাম দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৮৭৮ টাকায়। ২০১০ থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বারিধারায় ৫ হাজার ৫৬৫টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে। আর ঢাকায় অ্যাপার্টমেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ গড় দাম ধানমন্ডিতে, বর্গফুটপ্রতি ১৫৩ ডলার। তাতে দেশীয় মুদ্রায় প্রতি বর্গফুটের দাম দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৫ টাকা। গত ১৩ বছরে ধানমন্ডিতে ১৭ হাজার ৪৯৪টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে।

জানতে চাইলে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক খন্দকার মারুফ জাহান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ প্লাজা থেকে গুলশান ২ নম্বর পর্যন্ত আবাসন প্রকল্পে প্রতি বর্গফুট অ্যাপার্টমেন্ট বর্তমানে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর উত্তর গুলশানে প্রতি বর্গফুটের দাম ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা।  

Also Read: ২১ বছরে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে গড়ে ৫৩৯% 

রিহ্যাবের তথ্যানুযায়ী, অ্যাপার্টমেন্টের দাম বৃদ্ধির তালিকায় ঢাকার অন্য এলাকার চেয়ে অনেক এগিয়ে গুলশান। ২০২১ সালে গুলশানের অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গফুটের গড় দাম ছিল ১৪২ ডলার ৮২ সেন্ট। গত বছর সেটি ১৬ শতাংশ বেড়ে ১৬৬ ডলার হয়। একই সময়ে অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর উত্তরায় ১৪, বনানীতে ১৫, ধানমন্ডিতে ১২ এবং বারিধারায় প্রতি বর্গফুট অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ।

অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বেশি থাকায় শান্তা, সাউথ ব্রিজ, বিটিআই, র‌্যাংগস, আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক, কনকর্ড, ইনস্টারসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো গুলশানে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করছে। গুলশানের অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট কেনায় ব্যবসায়ীরা এগিয়ে। ক্রেতাদের তালিকায় সরকারি আমলা ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা আছেন, এমনটাই জানালেন একাধিক আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

Also Read: ফ্ল্যাটের দাম আরও নাগালের বাইরে

জানতে চাইলে রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন প্রথম আলোকে বলেন, ছোটবেলা থেকে যাঁরা গুলশানে বড় হয়েছেন, তাঁরা অন্য এলাকায় যেতে চান না। এমনকি তাঁদের ছেলেমেয়েরাও বসবাসের জন্য গুলশানের বাইরে যেতে চান না। সে কারণেই গুলশানে অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

রিহ্যাব সভাপতি আরও বলেন, আশির দশক থেকেই গুলশানে বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে। গত এক দশকে সেটি কয়েকগুণ বেড়েছে। তাতে ধীরে ধীরে গুলশানের জমির পরিমাণ কমে আসছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে আগামী কয়েক বছর পর গুলশানে বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের আর জমি পাওয়া যাবে না।

Also Read: নতুন ড্যাপ ‘বাড়িয়ে দেবে’ ফ্ল্যাটের দাম