
কৃষিতে বিশেষ অবদানের জন্য আট ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিয়েছে বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) ও চ্যানেল আই। সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক আবেদন যাচাই–বাছাইয়ের পর এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক জমকালো অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়েছে। বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও চ্যানেল আই যৌথভাবে দশমবারের মতো এই কৃষি অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ডের আয়োজন করেছে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয় এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ।
এ বছর ব্যক্তি পর্যায়ে আজীবন সম্মাননা, সেরা নারী কৃষক, সেরা পুরুষ কৃষক, পরিবর্তনের নায়ক, সেরা সাংবাদিক, সেরা মেধাবী সংগ্রামী কৃষক, সেরা জলবায়ু অভিযোজক, সেরা ছাদকৃষি উদ্যোক্তা, কৃষি গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিতে সেরা প্রতিষ্ঠান এবং কৃষিতে সহায়তা ও বাস্তবায়নে সেরা প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১১ শ্রেণিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অধ্যাপক আব্দুল হালিম। এ ছাড়া সেরা নারী কৃষক শ্রেণিতে আনোয়ারা খান ডলি, সেরা পুরুষ কৃষক শ্রেণিতে আক্কাস খান, পরিবর্তনের নায়ক শ্রেণিতে আব্দুস সালাম, বছরের সেরা মেধাবী সংগ্রামী কৃষক শ্রেণিতে পারভীন আক্তার ও আব্দুল গফুর। এ ছাড়া কৃষি অর্থনীতি, কৃষি প্রযুক্তি ও কৃষকদের নিয়ে সংবাদ তৈরি করায় সেরা কৃষি সাংবাদিক শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছেন ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, ছাদকৃষি উদ্যোক্তা শ্রেণিতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের হোসনে আরা সম্মাননা পেয়েছেন।
সম্মাননা পাওয়া তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেরা জলবায়ু অভিযোজক শ্রেণিতে সম্মাননা পেয়েছে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনিয়াস নলেজ (বিএআরএসআইকে), গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি শ্রেণিতে যশোরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানো-বায়ো অ্যান্ড অ্যাডভ্যান্স ম্যাটেরিয়ালস টেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ার (এনএএমএই) ল্যাব এবং কৃষকদের সহায়তা ও বাস্তবায়ন শ্রেণিতে কৃষি বাজার লিমিটেড।
দেশের প্রকৃত নায়ক আমাদের কৃষক। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশের ১৭ কোটি মানুষের তিন বেলা খাবার নিশ্চিত করা হয়। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান আগের তুলনায় কমলেও কৃষির গুরুত্ব কমেনি—নাসের এজাজ বিজয়, সিইও, এসসিবি
২০১৪ সাল থেকে দেশের কৃষিতে অবদান রাখার জন্য কৃষক, কৃষির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই সম্মাননা দিয়ে আসছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) ও চ্যানেল আই।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের কৃষিঋণ বর্তমানে মোট ঋণের ২ শতাংশ। তবে দেশের কৃষি খাত উন্নয়নে এই ঋণের পরিমাণ ১০ শতাংশ নিয়ে যেতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল রয়েছে। তবে এই ঋণ দেওয়া যাচ্ছে না কারণ ব্যাংকগুলোর সক্ষমতার অভাব রয়েছে। তবে চাইলেই অনেক কিছু করা যায়। এটি আজকে যারা পুরস্কার পেয়েছে তার প্রমাণ করেছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের পর দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ টন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি টনে, অর্থাৎ তিন গুণেরও বেশি। জনসংখ্যা দ্বিগুণের কিছু বেশি হলেও উৎপাদনশীলতা বেড়েছে তিন গুণের ওপর। এই অর্জন ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
অনুষ্ঠানে এসসিবি বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, দেশের প্রকৃত নায়ক আমাদের কৃষক। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশের ১৭ কোটি মানুষের তিন বেলা খাবার নিশ্চিত করা হয়। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান আগের তুলনায় কমলেও কৃষির গুরুত্ব কমেনি। তিনি আরও বলেন, নেদারল্যান্ডসে আবাদযোগ্য জমি মাত্র ২০ লাখ হেক্টর। আর জনসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। তবুও দেশটি কৃষিপণ্য রপ্তানি করে বছরে ১২৯ বিলিয়ন ইউরো আয় করছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমি প্রায় ৮০ লাখ হেক্টর। জনসংখ্যা ১৭ কোটি। তারপরও কৃষিপণ্য উৎপাদনের আর্থিক পরিমাণ মাত্র প্রায় ৫০ থেকে ৫২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ আমাদের সম্ভাবনা বিশাল।
চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট দেখা দিলেও বাংলাদেশে কোনো খাদ্যসংকট হয়নি। দেশের উৎপাদিত ফসল অনেক সময় পরিবহন ও সংরক্ষণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিতরণ ও সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।