
বেশি লাভের আশায় পুকুরের মাছচাষিরা বাণিজ্যিক খাবার, কীটনাশক, সার ও অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এতে মাছের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এ ছাড়া এসব উপকরণ সরবরাহ করা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছেও জিম্মি হয়ে পড়ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি মৎস্যচাষিরা।
ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে আজ সোমবার অ্যাগ্রো ইকোলজি কোয়ালিশন বাংলাদেশ, পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), জার্মানভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে (ডব্লিউএইচএইচ), ওয়েভ ফাউন্ডেশন ও এফআইভিডিবির উদ্যোগে আয়োজিত এক নীতি সংলাপে এসব বিষয় তুলে ধরেন বক্তারা। ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের মৌলিক নীতিমালা: বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণ’ শীর্ষক এ নীতি সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি শি জিয়াওকুন ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাকিলা ফারুক।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর সোশ্যাল রিসার্চের গবেষণা পরিচালক আহমেদ বোরহান। তাতে তিনি বলেন, অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে পুকুরের পানি দূষিত ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার গবেষণায় বলা হয়েছে দেশের ৯০ শতাংশের বেশি পোলট্রি খামারে নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে কাজ করা না হলে মানুষের মৃত্যুঝুঁকিও আছে। আবার ক্ষুদ্র কৃষকের জমি দখল করে প্রভাবশালীরা চিংড়িঘের তৈরি করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সরকারিভাবেই প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ সংগ্রহের আগ্রহ কমে গেছে বলে মন্তব্য করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নদী-হাওরের মাছের স্বাদই আলাদা। উন্মুক্ত পানির মাছের ক্ষতি হয়, এমন কিছু হতে দেব না আমরা। চায়না দুয়ারি জালের কারণে ছোট মাছ নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমরা কারখানায় গিয়ে এসব জাল পোড়াচ্ছি।’
পর্যটনের কারণে হাওরের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, পর্যটকেরা হাওরের মাছকে ধূমপায়ী করে ছাড়ছে। তারা হাওরে সিগারেট, চিপসের প্যাকেট ও প্লাস্টিক ফেলছে। আবার হাওরে বোরো ধানের সময় ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহার করায়ও মাছের ক্ষতি হচ্ছে।
সিলেটের হাওরে পাঁচ–সাত বছর আগেও প্রচুর দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও এখন তা পাওয়া যায় না বলে জানান সিলেটের গোয়াইনঘাটের কৃষক ও জেলে মো. মোস্তফা কামাল। হাওর ইজারা নিয়ে মোটর দিয়ে শুকিয়ে ফেলায় ছোট মাছ বড় হওয়ার সুযোগ থাকে না বলে জানান তিনি। তাই ছোট হাওর ইজারা না দেওয়ার সুপারিশ করেন এই জেলে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাকিলা ফারুক বলেন, মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সব পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রাণিসম্পদে অবদান রাখা ক্ষুদ্র খামারিরা হারিয়ে যাচ্ছেন।
সভাপতির বক্তব্যে মো. ফজলুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের রাসায়নিক সার ও কীটনাশকনির্ভর কৃষকদের সামাজিক আচরণ পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে ৩৬ শতাংশ ক্যানসারের রোগী কৃষক। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখারও প্রস্তাব করেন তিনি।
এই নীতি সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন অ্যাগ্রো ইকোলজি কোয়ালিশন বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। আর সঞ্চালনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক কানিজ ফাতেমা। সংলাপে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।