ছবি: এআই/প্রথম আলো
ছবি: এআই/প্রথম আলো

জেনে নিন

ফ্ল্যাট কিনতে পাশে আছে ব্যাংক

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের অর্থনীতিতে মন্দার প্রভাব স্পষ্ট। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে, পাশাপাশি বেড়েছে সুদহারও। শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে ঋণ বিতরণে স্থবিরতা দেখা দিলেও আবাসন খাতে তুলনামূলকভাবে কিছুটা চাঙাভাব বজায় রয়েছে। ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা প্রত্যাহারের পর অধিকাংশ ঋণের সুদহার বেড়ে গেলেও আবাসন ঋণের ক্ষেত্রে সেই চাপ তেমন পড়েনি।

বর্তমানে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ সুদে আবাসন ঋণ দিচ্ছে। অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদহার নিচ্ছে। তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল এই সুদহার আবাসন খাতে ঋণের প্রবাহ ধরে রাখতে সহায়তা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে গ্রামীণ এলাকায় আবাসন ঋণের গ্রাহক ছিলেন ৪৬ হাজার ৩০ জন, যাঁদের বিপরীতে ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। তবে সেপ্টেম্বর শেষে গ্রাহক কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৭৪৩ এবং ঋণের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩ হাজার ৭০৮ কোটি টাকায়। অপর দিকে শহর এলাকায় গ্রাহকসংখ্যা কিছুটা কমলেও ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। জুনে শহর এলাকায় আবাসন ঋণের গ্রাহক ছিলেন ৯৩ হাজার ৮৭৮ জন এবং ঋণের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে গ্রাহক কমে ৯৩ হাজার ৩৮১ জনে নামলেও ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্যে দেখা যায়, ২০২৫ সালের জুন শেষে ভোক্তাঋণ বছরওয়ারি ২৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে আবাসন ঋণেই সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত আবাসন ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে ২০২০ সালে দেশের আবাসন খাতে বড় ধরনের মন্দা দেখা দিলেও পরে সুদহার কমায় খাতটি ঘুরে দাঁড়ায়। সে সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জেলা শহরগুলোয় আবাসন ঋণ বিতরণে বিশেষ মনোযোগ দেয়।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আবাসন ঋণ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে বিবেচিত। এ ধরনের ঋণ দ্রুত খেলাপি হয় না এবং ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত গ্রাহকের নামে ফ্ল্যাট সম্পূর্ণভাবে রেজিস্ট্রি করা যায় না। ফলে গ্রাহকেরা ঋণ পরিশোধে সচেতন থাকেন।

মধ্যবিত্ত, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে নিজের একটি ফ্ল্যাট থাকা দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখছে আবাসন ঋণ। এ কারণে প্রায় সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি আবাসন ঋণ দিচ্ছে। ঋণ দেওয়ার আগে গ্রাহকের পরিচয়, আয়ের উৎস ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা হয়।

চলতি বছরে আবাসন ঋণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। গত নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি এ খাতে ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আবেদুর রহমান সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আবাসন ও ব্যক্তিগত ঋণে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এসব ঋণে সাড়া ভালো।’

তথ্য অনুযায়ী, আবাসন ঋণ বিতরণে শীর্ষ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে আইএফআইসি, ব্র্যাক ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্যাংক এশিয়া। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ডিবিএইচ, আইডিএলসি, আইপিডিসি, ন্যাশনাল হাউজিং ও লংকাবাংলা এগিয়ে আছে। কৃষকদের জন্য বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন চালু করেছে বিশেষ কৃষক আবাসন ঋণ কর্মসূচি।

দেশে আবাসন ঋণের সুদহার কমিয়ে প্রথম বড় আলোচনায় আসে বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংক। ২০১৫ সালের শুরুর দিকেও ব্যাংকটি যেখানে গৃহঋণের বিপরীতে ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ সুদ নিত, সেখানে ডিসেম্বরে তা কমিয়ে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশে নামিয়ে আনে। তখন ব্যাংক খাতে সুদহার ছিল ১৫ শতাংশের ওপরে। প্রতিষ্ঠানটি কম সুদে ঋণ বিতরণে সাফল্য পায়। গ্রাহকেরা সবচেয়ে বেশি আবাসন ঋণ নেন আইএফআইসি ব্যাংক থেকে। ব্যাংকটির ‘আমার বাড়ি’ নামে আলাদা একটি পণ্য রয়েছে। এই ব্যাংককে অনুসরণ করে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একই পথে হাঁটতে শুরু করে।

সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অরূপ হায়দার বলেন, ফ্ল্যাট কেনা একটি মৌলিক চাহিদা পূরণের বিষয়। তাই অর্থনৈতিক চাপের মধ্যেও এই খাতে ঋণ বিতরণ অব্যাহত আছে।