রপ্তানির জন্য তিন জাহাজ নোঙর করে রাখা হয়েছে কর্ণফুলী নদীতে
রপ্তানির জন্য তিন জাহাজ নোঙর করে রাখা হয়েছে কর্ণফুলী নদীতে

চট্টগ্রাম থেকে একসঙ্গে তিন জাহাজ রপ্তানি হচ্ছে আমিরাতে

চট্টগ্রামভিত্তিক জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড একসঙ্গে তিনটি ল্যান্ডিং ক্রাফট জাহাজ বা ছোট আকারের জাহাজ রপ্তানি করতে যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই তিনটি জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মারওয়ান শিপিং লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চট্টগ্রামের পটিয়ায় জাহাজ নির্মাণ কারখানাটির সামনে কর্ণফুলী নদীর তীরে জাহাজ তিনটির একটি ‘মায়া’তে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই তিনটি জাহাজ হস্তান্তর করা হয়। জাহাজ তিনটির নাম মায়া, এমি ও মুনা। তিনটি জাহাজই মূলত ল্যান্ডিং ক্রাফট। ল্যান্ডিং ক্রাফট হলো ছোট আকারের জাহাজ। ল্যান্ডিং ক্রাফট ধরনের জাহাজের পানির নিচে গভীরতা কম থাকায় অগভীর নৌপথেও এগুলো চলাচল করতে পারে। আবার খুব সহজেই মালামাল নিয়ে তীরের কাছে রসদ পরিবহনে ব্যবহার করা যায়।

জাহাজ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আল হমোদি বলেন, ‘দুই দেশের দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক আমাদের মধ্যকার বন্ধুত্বকে আরও সুদৃঢ় করবে। আশা করি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরও জাহাজ আরব আমিরাতে রপ্তানি হবে।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২৩ সালে ওয়েস্টার্ন মেরিন সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মারওয়ান শিপিং লিমিটেডের সঙ্গে আটটি জাহাজ নির্মাণের চুক্তি করেছিল। এই আটটি জাহাজের মধ্যে রয়েছে দুটি টাগবোট, চারটি ল্যান্ডিং ক্রাফট এবং দুটি ট্যাংকার। এই চুক্তির আওতায় এ বছর ৬৫ টন ও ৮০ টন বোলার্ড পুল ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি টাগবোট ‘খালিদ’ ও ‘ঘায়া’ এবং ‘রায়ান’ নামের একটি ল্যান্ডিং ক্রাফট রপ্তানি হয়। এখন তিনটিসহ ছয়টি জাহাজ রপ্তানি হচ্ছে। বাকি দুটি রপ্তানি হবে আগামী বছর।

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, সব মিলিয়ে এই আট জাহাজের রপ্তানিমূল্য ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে রপ্তানি হতে যাওয়া এই তিন জাহাজের রপ্তানিমূল্য ২২ লাখ ডলার।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) প্রশাসক আবদুর রহিম খান ও ওয়েস্টার্ন মেরিনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ওয়েস্টার্ন মেরিনের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, জাহাজ নির্মাণ একটি শ্রমঘন ও উচ্চ প্রযুক্তির ভারী শিল্প। জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা সম্ভব।

ওয়েস্টার্ন মেরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান বলেন, দেশে এই শিল্পের বিকাশের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি বরাদ্দ। পুঁজি পেলে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং দেশের রপ্তানি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে জাহাজনির্মাণ শিল্প খাত।

বাংলাদেশ থেকে প্রথম জাহাজ রপ্তানি করে ঢাকার আনন্দ শিপইয়ার্ড। ২০০৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ডেনমার্কে জাহাজ রপ্তানির মাধ্যমে এই অভিযাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০১০ সালে জাহাজ রপ্তানিতে যুক্ত হয় চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের নাম। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটি জার্মানিতে একটি সমুদ্রগামী জাহাজ রপ্তানি করে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ১১টি দেশে মোট ৩৬টি জাহাজ রপ্তানি করেছে, যার বাজারমূল্য ১৩ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি।